শিরোনাম

মো. মিজানুর রহমান
পিরোজপুর, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস) : আগামীকাল ৮ ডিসেম্বর পিরোজপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পিরোজপুর পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়। বিজয়ের এই দিনে ঘরে ঘরে উড়েছিল লাল সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। পিরোজপুরের ইতিহাসে এ দিনটি বিশেষ স্মরণীয়।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর আয়োজনে আগামীকাল (৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯:৩০ টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা এবং ৯.৪৫ টায় শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকায় গণহত্যা চালানোর পরে সারাদেশের মানুষ আতঙ্কিত এবং দিকবিভ্রান্ত হয়ে পরে। কিন্তু ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে শুরু হয় প্রতিরোধ। আর শুরু হয় পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুর ছিল মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরের অধীন। এ অঞ্চলে যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন, সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
পিরোজপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৩ মে পিরোজপুরে প্রথম পশ্চিম পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী প্রবেশ করে। বরিশাল থেকে গানবোটে চড়ে ৩২ পাঞ্জাব ও ২২ বালুচের ২ প্লাটুন পাকিস্তানি বর্বর সৈন্য শহরের প্রবেশদ্বার হুলারহাট নৌ-বন্দর থেকে শহরে প্রবেশের পথে প্রথমেই তারা মাছিমপুর ও কৃষ্ণনগর গ্রামে শুরু করে নারকীয় গণহত্যা। এ দিনেই তারা শতাধিক নিরাপরাধ নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে। জ্বালিয়ে দেয় শহর ও শহরতলীর শতশত বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাটসহ খাদ্যগুদাম।
একে একে হত্যা করতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য স্বাধীনতার পক্ষের লোকজন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার অপরাধে ৫ মে পিরোজপুরের বলেশ্বর নদের বধ্যভূমিতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তখনকার মহাকুমা প্রশাসক মো. আব্দুর রাজ্জাক, ১ম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল বারী, মো. মিজানুর রহমান, হুমায়ুন আহমেদ ও জাফর ইকবাল এর পিতা মহাকুমা পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান আহমেদসহ সরকারি কর্মকর্তাদের।
একইভাবে ৮ ডিসেম্বর পালিয়ে যাওয়ার দিন পর্যন্ত রক্ত পিপাষু পাকিস্তানি বর্বর হায়েনারা হত্যা করে তখনকার ছাত্রনেতা ওমর ফারুক, ফজলুল হক খোকন, বিধান মন্টু, সেলিম, যশোর শিক্ষা বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ১ম স্থান অধিকারকারী গণপতি হালদার, জিয়াউজ্জামান, গৃহবধু ভাগিরথী সাহাসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে।
পিরোজপুরের সে সময়কার রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বাতেন বলেন, পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল অস্ত্রের। অস্ত্র সংগ্রহের জন্য মে মাসের ৫ তারিখে আমি (বাতেন) সালাম, খোকনসহ পিরোজপুর ট্রেজারি থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করি।
তিনি বলেন, পিরোজপুর হানাদার মুক্ত করতে সুন্দরবনের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদের কাছে ট্রেনিং গ্রহণ করে দেশ মাতৃকার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তার নির্দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ৭ ডিসেম্বর রাতে সামছুল হক খান এর নেতৃত্বে পাড়েরহাটের দিক থেকে এবং হাবিবুর রহমান সিকদারের নেতৃত্বে আরেকটি শক্তিশালী দল নাজিরপুরের পথ ধরে শহরের দিকে দ্রুত এগিয়ে আসতে থাকে।
৭ ডিসেম্বর শহরের চারদিক থেকে আমরা পিরোজপুরে প্রবেশ করি। এ খবর পেয়ে ৮ ডিসেম্বর দখলদার বাহিনী পিরোজপুর ছেড়ে গানবোটে চড়ে বরিশালের দিকে পালিয়ে যায়। এর মাধ্যমে মুক্ত হয় পিরোজপুর। আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে সাধারণ জনগণ।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সভাপতি মনিরুজ্জামান নাসিম বলেন, ৭ ডিসেম্বর পিরোজপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবেশের খবর পেয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ৮ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা বরিশাল হয়ে পালিয়ে যায়। যাওয়ার আগে তারা ব্যাংক, ট্রেজারি লুট করে এবং তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে শহরের বসন্তপুল এলাকায় গাড়ি দুর্ঘটনায় পাকিস্তানি সুবেদার সেলিম নিহত হয়। একইদিন সিআই পাড়ায় সিএন্ডবি ক্যাম্পে অবস্থিত রাজাকাররা মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।