বাসস
  ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩:৫৫

ঢাবিতে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ঢাকা, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পানি নিরাপত্তা ও জলবায়ু পরিবর্তন: স্থানীয় অভিজ্ঞতা ও বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের অর্থায়নে এবং ঢাবির সেন্টার ফর কালচার এন্ড রিজিলিয়েন্স স্টাডিজ এর সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ এই সম্মেলনের আয়োজন করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী মো. ওয়ালিউল হক, ডব্লিউএসসিসি গবেষণা প্রকল্পের সহকারী পরিচালক ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তৈয়বুর রহমান।

অনুষ্ঠানে মূল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ এর উদেষ্টা ড. আইনুন নিশাত। এছাড়া বক্তব্য রাখেন নেপালের পাঠান একাডেমি অব হেলথ সায়েন্সেস-এর স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক মধুসূদন সুবেদী এবং ওয়াটার রিসোর্সেস ইন্সটিটিউট আফ্রিকা’র ওয়াটার প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট ড. জাবলান আদানে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সম্মেলনের আহ্বায়ক ড. তারেক আহমেদ। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন সেন্টার ফর কালচার এন্ড রিজিলিয়েন্স-এর পরিচালক ও ডব্লিউএসসিসি এর গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক হাসান শাফি।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নারীরা মারাত্মক জলসংকটে ভুগছেন-এমন বাস্তবতা তুলে ধরে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আন্তর্জাতিক পরিসরে জলবায়ু ন্যায্যতা, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও ন্যূনতম আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করার আহবান জানান।

তিনি বলেন, পরিবারে পানির যোগানদাতা হিসেবে নারীরাই প্রধান দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু উপকূলে এমন সব এলাকা রয়েছে, যেখানে টানা তিন-চার দিন নারীরা গোসল করার মতো পর্যাপ্ত পানি পান না। পরিবারকে নিরাপদ পানীয় জল এনে দিতে তাদের কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়। এতে তাদের সময় নষ্ট হচ্ছে এবং ঘরে সন্তানরা অনিরাপদ পরিবেশে থাকে।

উপদেষ্টা বলেন, উপকূলীয় কিশোরীরা মাসিক নিয়ে আতঙ্কে থাকে। অনেকেই জন্ম-নিয়ন্ত্রক বড়ি খেয়ে মাসিক দুই-তিন মাসে একবারে নামিয়ে আনে, শুধু পানির অভাবে নিজেদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে না পারার কারণে। গর্ভবতী নারীদের মধ্যে এক্ল্যাম্পসিয়ার মতো জটিলতা বাড়ছে, যা এখন সেখানে সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, অভিযোজন ও ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি দাতা দেশগুলো পালন করছে না। নতুন আরও আর্থিক সহায়তার কথা থাকলেও বাস্তবে অনেক দেশ ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। ফলে যে দুর্ভোগ বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সৃষ্টি নয়, সেই দুর্ভোগ মোকাবিলার জন্যও তাদের ঋণ নিতে হচ্ছে।

বাংলাদেশের পানি নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সীমান্তবর্তী নদীগুলোর পানিবণ্টন আন্তর্জাতিক রাজনীতির সাথে জড়িত। উজানের দেশগুলো প্রয়োজনের সময় পানি দিতে অনীহা দেখালেও বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেয়। এতে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়। আর শুষ্ক মৌসুমে দেখা দেয় পানির ঘাটতি। ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘের ট্রান্স-বাউন্ডারি ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট কনভেনশন ২০২৪ সালে কার্যকর হলেও বহু উজানের দেশ এখনো স্বাক্ষর করেনি।

বাংলাদেশ যদিও এখনো এই কনভেনশনে যোগ দেয়নি, তবে ইউরোপকেন্দ্রিক আরেকটি পানি-বণ্টন সংক্রান্ত ইউএন কনভেনশনে ইতোমধ্যে যোগ দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক আলোচনার নতুন প্ল্যাটফর্ম দিতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সরকার বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ (রেইনওয়াটার হারভেস্টিং) ও নদী-খাল পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা।

উপকূলে ছোট আকারে স্বল্প খরচে ডেস্যালিনেশন প্ল্যান্ট চালু করা হচ্ছে, যেখানে স্থানীয় নারীরাই ব্যবস্থাপনা করবেন।

পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা সতর্ক করে বলেন, অভিযোজনের একটি সীমা আছে। উন্নত দেশগুলো যদি সময়মতো এবং কার্যকরভাবে কার্বন নিরসনের (মিটিগেশন) পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে যত অর্থই আসুক না কেন, ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো অভিযোজনে সক্ষম হবে না। বিশাল অংশ পানিতে তলিয়ে গেলে কিংবা মালদ্বীপের মতো দেশ অস্তিত্ব হারালে কোনো অর্থই সেই ক্ষতিপূরণ দিতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, আজ শুধু পানি নিরাপত্তা নয়, এটি পানি ন্যায্যতার প্রশ্ন। উন্নয়ন প্যারাডাইম, ভোগের ধরন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি বদলাতে না পারলে জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, আমি আশা করছি এই সম্মেলন থেকে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময়ই যেকোন সংকটে সবার আগে এগিয়ে আসে এবং জলবায়ুর এই সংকটেও এগিয়ে আসবে।