বাসস
  ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৪

হংকংয়ের বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যু

হংকং, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বৃহস্পতিবার হংকংয়ের একটি বহুতল ভবন কমপ্লেক্সে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যু ও আরো শতাধিক লোক নিখোঁজ হয়েছে।

দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ কথা জানিয়েছে।

বুধবার বিকেলে হংকংয়ের আটটি ভবন বিশিষ্ট একটি আবাসিক ভবন কমপ্লেক্সে ভয়াবহভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। 

খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র। 

বিগত কয়েক দশক ধরে দেশটির অর্থনৈতিক কেন্দ্র এই কমপ্লেক্সটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও সারা শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই এলাকায় বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ও উঁচু আবাসিক ব্লক রয়েছে।

পুলিশ বৃহস্পতিবার ভোরে জানিয়েছে যে রক্ষণাবেক্ষণের সময় দাহ্য পদার্থ ফেলে রাখার কারণে আগুন ‘দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ চলে যায়।

বৃহস্পতিবার ভোর হওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত এএফপি’র সাংবাদিকরা কিছু ফ্ল্যাট তখনও জ্বলতে দেখেছেন। যদিও ভোরের দিকে আগুন লক্ষণীয়ভাবে কমে গিয়েছিল।

বুধবার উত্তরাঞ্চলীয় তাই পো জেলার ওয়াং ফুক কোর্টের ওই ভবনের বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে বাঁশের ঝুলন্ত মাচাগুলোতে প্রথমে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। 

এখান থেকেই ওই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটেছে। 

তখন ওই স্থানে পুরো এস্টেট জুড়ে মেরামতের কাজ চলছিল।

একজন এএফপি’র সাংবাদিক বিকট শব্দ শুনতে পান। শব্দগুলো সম্ভবত জ্বলন্ত বাঁশ থেকে আসছিল। এ সময় তিনি আগুন ও ছাই আকাশের দিকে উড়তে দেখেন।  

এএফপি’র ওই সাংবাদিক ভবনগুলো থেকে আকাশের দিকে ধোঁয়ার ঘন কুণ্ডলী উড়তে দেখেন।

ইউয়েন নামে একজন ৬৫ বছর বয়সী বাসিন্দা বলেছেন, তিনি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে কমপ্লেক্সে বসবাস করছেন এবং তার অনেক প্রতিবেশী বয়স্ক ছিলেন এবং সম্ভবত তারা চলাচল করতে পারতেন না।

ইউয়েন এএফপিকে বলেন, ‘ক্ষণাবেক্ষণের কারণে জানালা বন্ধ ছিল, (কিছু লোক) জানত না যে আগুন লেগেছে এবং প্রতিবেশীদের ফোন কলের মাধ্যমে তাকে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল।’

হংকংয়ের দমকল বিভাগ বৃহস্পতিবার সকালে জানিয়েছে, এই ঘটনায় ৪৪ জন মারা গেছে।

দমকল বিভাগের পরিচালক অ্যান্ডি ইয়ুং জানান, নিহতদের মধ্যে ৩৭ বছর বয়সী একজন দমকলকর্মীও রয়েছেন। সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আধ ঘন্টা পর আগুনে তার মুখ পুড়ে যায়।

বৃহস্পতিবার ভোরবেলা সিটি লিডার জন লি বলেন, এই ঘটনায় ২৭৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

যদিও দমকলকর্মীরা পরে জানিয়েছেন যে তারা এই লোকদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

লি বলেন যে ৯০০ জনেরও বেশি লোক অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রের একজন পুলিশ কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন যে কতজন নিখোঁজ রয়েছেন, তা স্পষ্ট নয় কারণ বাসিন্দারা এখনও গভীর রাত পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের নিখোঁজ হওয়ার খবর জানাতে ছুটে আসছেন।

জ্বলন্ত ব্লক থেকে পোড়া মাচাগুলোর টুকরো পড়েছিল এবং অ্যাপার্টমেন্টের ভিতরে আগুন দেখা যাচ্ছিল। 

কখনও কখনও জানালা দিয়ে রাতের আকাশে ঢেউ খেলে আশেপাশের ভবনগুলোতে এক ভয়াবহ কমলা আভা ছড়িয়ে পড়েছিল।

ফায়ার সার্ভিস অপারেশনের উপ-পরিচালক ডেরেক আর্মস্ট্রং চ্যান বলেছেন, ‘ঘটনাস্থলের তাপমাত্রা খুব বেশি এবং কিছু তলা রয়েছে, যেখানে আমরা সাহায্যের জন্য অনুরোধ করা লোকদের কাছে পৌঁছাতে পারিনি।  

তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, বাতাস ও ভাসমান ধ্বংসাবশেষের কারণে আগুন সম্ভবত এক ভবন থেকে অন্য ভবনে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও তিনি যোগ করেছেন যে কর্তৃপক্ষ আগুনের কারণ তদন্ত করছে।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ‘কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যাওয়া অগ্নিনির্বাপক কর্মীসহ’ ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক সিসিটিভি জানিয়েছে, শি ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার ও এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আগুন নেভাতে ও হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

সিটি লিডার জন লি জানান, তিনি ‘গভীরভাবে দুঃখিত’ এবং সমস্ত সরকারি বিভাগ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সহায়তা করছে।

৫৭ বছর বয়সী তাই পো বাসিন্দা সো বলেন যে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ছিল ‘হৃদয়বিদারক’।

সো এএফপিকে বলেন, ‘সম্পত্তি সম্পর্কে কিছুই করা সম্ভব নয়। আমরা কেবল আশা করতে পারি যে বৃদ্ধ বা তরুণ নির্বিশেষে সকলেই নিরাপদে ফিরে আসতে পারবেন।’

চল্লিশের কোঠায় থাকা একটি অ্যাপার্টমেন্ট মালিক এএফপিকে বলেন, সরকারের এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গৃহহীন হয়ে পড়া মানুষকে সহায়তা করা প্রয়োজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তি আরো বলেন, ‘আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি এবং আমি সেখান থেকে বের হতে সাহস পাচ্ছি না। আমি জানি না, এখন আমার কী করা উচিৎ।’ 

স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে যে, বড় বগির মাধ্যমে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সংলগ্ন ব্লকগুলোও পরিষ্কার করা হচ্ছে।

অগ্নিনির্বাপণ অভিযানের মাধ্যমে নিকটবর্তী একটি মহাসড়কের কিছু অংশও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ঘনবসতিপূর্ণ হংকংয়ে, বিশেষ করে দরিদ্র এলাকাগুলোতে, এক সময় মারাত্মক অগ্নিকাণ্ড একটি নিয়মিত ব্যাধি ছিল।

তবে, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং এই ধরনের অগ্নিকাণ্ড এখন অনেক কম ঘটে থাকে।