শিরোনাম

মেহেরপুর, ২১ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): জেলায় গ্রামীণ জনপদে চলছে আমন ধান কাটার ব্যস্ততা। মাঠজুড়ে সোনালি ধানের ঢেউ আর কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ভোরের কুয়াশা ভেঙে কৃষক-শ্রমিকেরা জমিতে নেমে পড়ছেন কাঁচি-ধানকাটা যন্ত্র হাতে। কোথাও আবার দল বেঁধে কাটছে ধান, চলছে গান-বাজনা আর খোঁজ খবরের আড্ডা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছরের আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। ফলে ব্যস্ততার মাঝেও তাদের মুখে তৃপ্তির ছাপ। কাটার পর ধান মাড়াই, শুকানো ও গোলায় তোলার কাজও চলছে সমানতালে। অনেক পরিবারে ধান কাটার দিনটিকে কেন্দ্র করে থাকে আত্মীয়-স্বজনের সমাগম।
মাঠে কাজের ফাঁকে গ্রামের বয়স্করা বলেন, আমন কাটার মৌসুম শুধু কৃষিকাজের নয়, এটি গ্রামীণ ঐতিহ্যেরও উৎসব। একসঙ্গে কাজ, হাসি-আড্ডা আর ফসল ঘরে তোলার আনন্দ মিলিয়ে এ সময়টাকে তারা বছরের সবচেয়ে খুশির সময় বলে মনে করেন।
জেলায় এবছর ২৬৮৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে, ১,১৭ ৪০০ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় এবার ধানের ভালো ফলন হয়েছে। দামও ভালো। প্রতি মণ ধান পাইকারী ১১‘শ টাকা থেকে ১২’শ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই হিসেবে ৩২ কোটি টাকার ধান উৎপাদন হবে।
চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশী জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। ধান কাটা, আটি বাধা, মহিষের গাড়ি কিংবা ইঞ্জিনচালিত গাড়ি ভর্তি করে নিয়ে এসে মাড়াই করতে ব্যস্ত চাষীরা । জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আয়ুব আলী জানান, এবছর তিন বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছেন । চাষ, চারা রোপণ ও পরিচর্যায় শ্রমিক খরচও বেড়েছে।
প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ১২-১৪ হাজার টাকা। যা গতবারের চেয়ে ২-৩ হাজার টাকা বেশি। বিঘা প্রতি ১৬ থেকে ২০ মণ ফলন হয়েছে বলে তিনি জানান। গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে বিচালির চাহিদা বেশি থাকায় প্রতি বিঘা জমির বিচালি ১০-১১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম জানান, এবার ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। এ বছর জমিত তেমন সেচ দিতে হয়নি। তবে পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। কয়েক বার কিটনাশক ছিটিয়ে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সঞ্জীব মৃধা জানান, জেলায় এবার ২৬৮৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। বর্তমান বাজার দর ১২০০ টাকা মন হিসেবে ধান বেচাকেনা হবে ৩২ কোটি টাকার। প্রকৃতি অনকূলে থাকায় এবার ফলনও ভালো হয়েছে।