শিরোনাম

চট্টগ্রাম, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : সবুজ অরণ্য আর পাহাড়ে ঘেরা প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। জ্ঞান বিতরণের সুদীর্ঘ পথের সাক্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎযাপিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে আজ সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মরণ চত্বরে (জিরো পয়েন্ট) উপ-উপাচার্য (দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন।
এরপর স্মরণ চত্বর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্যের নেতৃত্বে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি চবির কাটাপাহাড়, শহীদ মিনার প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
সকাল ১০টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে উপাচার্য ‘৬০তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের’ কেক কাটেন।
এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে শুরু হয় আলোচনা সভা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন চবির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চবির সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য এবং চাকসুর সাবেক ভিপি এস.এম. ফজলুল হক। এতে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-আমীন।
চবির ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী।
স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পিছনে রয়েছে চট্টগ্রামের বিদ্যোৎসাহী সমাজের দীর্ঘদিনের নিরলস প্রচেষ্টা। প্রতিষ্ঠালগ্নে মাত্র ৮ জন শিক্ষক, ২০৪ জন শিক্ষার্থী এবং ৪টি বিভাগ নিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, সময়ের পরিক্রমায় আজ ৯টি অনুষদ, ৬টি ইনস্টিটিউট, ৪৮টি বিভাগ এবং ২৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী নিয়ে তা বিশাল কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে।”
এস.এম. ফজলুল হক বলেন, “১৯৭১ সালে আমি হাটহাজারী থানার কমান্ডার ছিলাম। আমরা যুদ্ধ করেছি দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম যে শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত হবে, স্বপ্ন দেখেছিলাম পরিবর্তনের। কিন্তু আমরা পারিনি। চব্বিশের বিপ্লবের পরও আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম পরিবর্তন হবে। কিন্তু আশানুরূপ পরিবর্তন দেখছি না। এখন কঠিন একটা সময়। কাজ করার ধরনও পরিবর্তন হয়েছে। চবির একটি গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক বিশ্বব্যাপী সুনাম ছড়িয়েছে। আশা করি সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সফলভাবে এগিয়ে যাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ও ফজলুল কাদের চৌধুরীকে স্মরণ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, “দীর্ঘ পথচলায় অনেক বাধা-বিপত্তি ও প্রতিকূলতার পরও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন বিশ্ব ইতিহাসে অনন্য পর্যায়ে পৌঁছেছে।
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিশ্ববিখ্যাত ভৌতবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জামাল নজরুলসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য গুণী শিক্ষক-শিক্ষার্থী দেশে-বিদেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং করছেন।
গবেষণায়-উচ্চশিক্ষায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান কোনো অংশেই কম নয়। অনেক ক্ষেত্রে বাজেট স্বল্পতার কারণে সীমাবদ্ধতা থাকে, এজন্য চাইলেই সবকিছু করা যায় না।”
তিনি বলেন, “জুলাই বিপ্লবের পর ভঙ্গুর অবস্থায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা অনেক কাজ করেছি। এরমধ্যে কিছু দৃশ্যমান হয়েছে আরও কিছু কাজের ফলাফল পেতে কয়েক বছর সময় লাগবে। আমাদের বিভাগগুলোতে যুগোপযোগী সিলেবাস ছিল না। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন করে শিক্ষার মান উন্নত করার জন্য। এম.ফিল-পিএইচডির নীতিমালা পরিবর্তন করা হয়েছে। গবেষণার জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, একাডেমিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আপোস করবো না।”
এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চবির কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল শাহীন খান, চবি শামসুন নাহার হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. বেগম ইসমত আরা হক, চবি সিন্ডিকেট সদস্য ও প্রীতিলতা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ হাসমত আলী, চবি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. মাহফুজুল হক (মাহফুজ পারভেজ), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) ভিপি ইব্রাহীম হোসেন রনি, চাকসুর জিএস সাঈদ বিন হাবিব, চাকসুর এজিএস আইয়ুবুর রহমান তৌফিক।