শিরোনাম

।। বেলাল রিজভী।।
মাদারীপুর, ৯ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জেলার সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের মহিষেরচর এলাকায় আড়িয়ালখা নদীর পাড় থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নেয়ায় নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে পুরো গ্রামটি। আর এ ঘটনায় গ্রামবাসী ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন। একাধিকবার প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
জানাযায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের মহিষেরচর এলাকায় আড়িয়ালখা নদীর পাড় থেকে প্রতিদিন রাতের আঁধারে একটি প্রভাবশালী মহল ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে পুরো গ্রামটি নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।
শুধু আড়িয়াল খা নয়, কুমার নদী, নিম্ন কুমার ও পালরদীর তীরেও একইভাবে অবৈধ মাটি তোলার অভিযোগ রয়েছে। জেলার অন্তত ২০টি স্থানে নদীর পাড় থেকে অবৈধভাবে মাটি চুরির একই চিত্র দেখা গেছে। এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে, বাহেরচর কাতলা, রাজারচর, পখিরা, তিন নদীর মুখ, চর কালকিনি, চর হোগলপাতিয়া ও চর ব্রাহ্মন্দীসহ বিভিন্ন স্থান। রাতের অন্ধকারে ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে মাটি কেটে ট্রলারে করে অন্যত্র নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের মহিষের চর গ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান সাইফ বলেন, আমরা বহুবার প্রশাসনকে জানিয়েছি, তবুও মাটি চুরি থামানো যায়নি।
প্রতিদিন রাতেই তারা নদীর পাড় থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে ট্রলারে করে নিয়ে যায়।
স্থানীয় মিন্টু সরদার বলেন, প্রতিদিন রাতেই এখান থেকে মাটি চুরি করে নিয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বসতবাড়ি ও ফসলি জমিসহ সব কিছু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আমরা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে এর প্রতিকার চাই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীর পাড় ও তলদেশ থেকে অতিরিক্ত মাটি তোলা হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়। এতে তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন বৃদ্ধি পায় এবং বর্ষা মৌসুমে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। একইসঙ্গে এর প্রভাব পড়ে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ও কৃষির ওপর।
মাদারীপুরের স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও অ্যাডভোকেট আবুল হাসান সোহেল বলেন, নদী থেকে মাটি তোলা মানে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। এতে নদীর ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং ক্রমান্বয়ে নদী ভাঙন বাড়ে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চরাঞ্চলগুলো মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাবে।
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে নিয়মিত টহল ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা দরকার।
অবৈধ মাটি খনন বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে আইন প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বাড়ানোরও আহ্বান জানান তিনি।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা খলিল চৌকিদার বলেন, এই নদী আমাদের জীবিকার উৎস ছিল, এখন সেটা ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন নদীর মাটি কেটে নেওয়ার ফলে আমরা বসতবাড়ি ও ফসলি জমিসহ সব কিছু নদীগর্ভে হারানোর আতঙ্কে আছি। নদীর পাড় থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটা এবং নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের প্রতি।
এ বিষয় মাদারীপুর জেলা প্রশাসক আফসানা বিলকিস বাসস’কে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। যারা নদীর পাড় থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’