শিরোনাম

মোফাজ্জেল হোসাইন
বরিশাল, ৬ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস) : প্রযুক্তির কল্যাণে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। আর বরিশালের নারী উদ্যোক্তারা প্রযুক্তির কল্যাণে সফলতার পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করে নিজেরাও এগিয়ে যাচ্ছেন। নারী উদ্যোক্তাদের তৈরিকৃত বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর বরিশালে প্রায় আড়াই কোটি টাকার বাজার তৈরি হয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছে বিসিক।
ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসলে নারী উদ্যোক্তারা আরও এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন, উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি।
বর্তমান এই যান্ত্রিক কর্মব্যস্ত দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রই আজ প্রযুক্তিনির্ভর। প্রযুক্তির কল্যাণে অনলাইনে নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বাড়ছে। নিত্য নতুন পন্থায় এই প্রযুক্তির কল্যাণেই তারা তৈরি করছেন তাদের নিজস্ব কর্মসংসস্থান। পোশাক, বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, কসমেটিক্স, জুয়েলারী, অর্নামেন্টসসহ নানান পণ্যের ব্যবসা জনপ্রিয়তা পেয়েছে এখানে। আজকাল মানুষ ভিড় এড়িয়ে অনলাইনসহ বিভিন্ন পন্থায় কেনাকাটা করছেন। প্রযুক্তির ছোয়ায় মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে উঠছে সহজ। দিন দিনে নারীরাও আজ প্রযুক্তিবান্ধব হয়ে উঠেছেন।
বর্তমানে অনেক নারীই ডিজিটাল প্লটফর্মে যুক্ত হয়ে ব্যবসা পরিচালনায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এতে করে ঘরে বসেই ঘর সংসারের কাজের পাশাপাশি বাড়তি উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছেন নারীরা। অল্প পুঁজিতে নারীরা অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে নিজেদের সফলভাবে প্রকাশ করছেন সমাজে। বর্তমানে বরিশাল জেলায় ৩ শতাধিক নারী উদ্যোক্তা বিভিন্ন ব্যাবসায় এমনি ভাবে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছেন। দিন দিনই উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে।
তেমনি একজন লিসা ইউসুফ। পরিবারের কাজের পাশাপাশি অনলাইন পেজ খুলে ঘরে বসেই ছোট পরিসরে শুরু করেছিলেন বার্গার, সিঙ্গারা, রোল, মিষ্টিসহ নানা ধরনের খাবারের বেচাকেনা। ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তার খাবার পৌঁছে যায় ক্রেতাদের কাছে। ৩ বছর ধরে একটু একটু করে আজ এই অনলাইনের মাধ্যমে খাবার বিক্রি করে তার মাসে আয় প্রায় ১ লাখ টাকা। গত দুই বছরে এ কার্যক্রমে জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছেন বেশ।
শুধু মাত্র লিসা ইউসুফ নয় এরকম অনেকেই আছেন, যারা ঘরে বসেই খাবার তৈরি করে ডেলিভারি করছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অফিসেও। নিজের বা প্রতিষ্ঠানের পরিচিত বাড়াতে অংশগ্রহণ করছেন বিভিন্ন উদ্যোক্তা মেলায়ও।
এ বিষয়ে উদ্যোক্তা লিসা ইউসুফ বলেন, সংসার ছেলে মেয়ে সামলে চাকুরী করা পসিবল ছিলনা। সেই থেকে নিজের সার্কেলের ভেতরে কাজ করা শুরু। ৩ বছর ধরে একটু একটু করে আজ এই অনলাইনের মাধ্যমে খাবার বিক্রি করে তার মাসে আয় প্রায় ১ লাখ টাকা।
এমনই আর একজন উদ্যোক্তা ইসরাত জাহান। নিপুন হাতে সাজিয়ে তুলছেন কেকের ওপরে বিভিন্ন ধরনের নকশা। ইসরাত জাহানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রথমে বাসায় বসে কেক তৈরি করে অনালাইনের মাধ্যমে বিক্রি করলেও এখন নিজেই গড়ে তুলেছেন একটি প্রতিষ্ঠান। অনলাইন ও অফলাইন মিলিয়ে প্রতিমাসে কেক বিক্রি করেন দেড় থেকে দুই লাখ টাকার।
ইসরাত জাহান, লিসা ইউসুফসহ বরিশালে অনেকেই আছেন যারা অনালাইনে শুরু করলেও আজ নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান। নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি তৈরি করেছে অনেকের কর্মসংস্থানও। নিজের সফলতার পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তারা তৈরি করছেন নতুন নতুন কর্মসংস্থান।
ঘরে বসেই ব্লকের কাজ করছেন রুবায়েত রাফা। প্রতি মাসে আয় করছেন ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। এভাবে নিজের চেষ্টায় পোশাক, কসমেটিক্স, জুয়েলারী, অর্নামেন্টসসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন তিনি।
শুধুমাত্র বরিশালেই নয়, অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য পাঠাচ্ছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। নিজ উদ্যোগে স্বাবলম্বী হতে পেরে খুশি উদ্যোক্তারা। সল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা এবং নারীদের জন্য একটি মার্কেট প্লেস তৈরি হলে আগামীতে দেশের অর্থনীতিতে বড় ভুমিকা রাখার কথা জানিয়েছেন তারা।
রুবায়েত রাফা বলেন, আমি আজ নিজেই সাবলম্বী। নিজের চেষ্টায় পোশাক, কসমেটিক্স, জুয়েলারী, অর্নামেন্টসসহ নানা জিনিসের প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছি। বর্তমানে আমি ও আমার সাথে আরো অনেক নারী উপার্জন করে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমারা এখন আর পিছিয়ে নেই।
বরিশাল উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি বিলকিস আহমেদ লিলি জানান, স্থানীয় ভাবে মূলত অনলাইনে মানুষের খাদ্য পণ্য ও পোশাকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষই অনলাইনের প্রতি ঝুঁকছেন, এতে এ খাত আরো প্রসারতি হচ্ছে। তবে বিভিন্ন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো যদি নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে তাহলে নারী উদ্যোক্তারা আরও এগিয়ে যাবেন।
জানতে চাইলে বরিশাল বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক জালিস মাহামুদ বাসস’কে জানান, নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং পরিচালনা করছে বিসিক। এছাড়া নারীদের সুবিধার্থে সল্প সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থাও করেছে। নারীদের এই পথচলায় যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করবে বিসিক এমন আশ্বাস দিয়েছেন এই কর্মকর্তা। বর্তমানে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে। তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের ফেইজবুক ভিত্তিক গ্রুপের মাধ্যমেও নিজের পরিচিতি বাড়াচ্ছেন উদ্যোক্তারা। যেসব নারীরা কিছু একটা করতে চায় অনলাইন পাল্টফর্মে, তাদের জন্য দারুণ একটা সুযোগ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।