শিরোনাম

বেলাল রিজভী
মাদারীপুর, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): জেলার চরমুগুরিয়া এলাকায় বানরের জন্য নির্মিত ইকোপার্ক এখন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির প্রতীকে পরিণত হয়ে অচল রয়েছে। প্রায় ৬৫ কোটি টাকায় দুই দফায় নির্মিত এই ইকোপার্কে নেই বানরের খাবারের কোনো ব্যবস্থা, নেই তাদের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ। তবে রয়েছে বহুতল ভবন, বিশাল আকারের সুইমিংপুল, চারটি পিকনিক স্পট ও চিলড্রেন কর্নার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে,একসময় মাদারীপুরের বানর ছিল দেশজুড়ে পরিচিত। কিন্তু বানরের খাদ্যসংকটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে সদর উপজেলার চরমুগুরিয়া ও আশপাশের মানুষ। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২০১৬ সালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় সাড়ে ১০ একর জমিতে ‘বানর অভয়াশ্রম’ নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রথম দফায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় সীমানাপ্রাচীর, বানরের থাকার শেড ও কিছু স্থাপনা। প্রকল্প অনুযায়ী কাঁঠাল, পেয়ারা, ডুমুর, আমসহ বানরের খাদ্যোপযোগী গাছ লাগানোর কথা থাকলেও তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।
কাজ শেষ না হতেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বিল তুলে নেয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালে পুরনো স্থাপনা ভেঙে ‘চরমুগুরিয়া ইকোপার্ক আধুনিকায়ন প্রকল্প’ হাতে নেওয়া হয়। এর অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩১ কোটি ৭৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা, যা দুই দফা সংশোধনের মাধ্যমে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ কোটি ৭৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
প্রকল্পের ঠিকাদার ছিলেন সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের ভাই হাফিজুর রহমান যাচ্চু খান। ১১টি প্যাকেজে কাজ হাতে নেওয়া হলেও ২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মোট প্রায় ৬৫ কোটি টাকার এই প্রকল্প এখন কার্যত অচল অবস্থায় রয়েছে। এরপই মধ্যে বিপুল পরিমান বিল উত্তোলন করে পালিয়েছে ঠিকাদার। তবে কি পরিমান টাকা উত্তোলন করেছে তার হিসাব নেই স্থানীয় বনবিভাগ এবং জেলা প্রশাসেনর কাছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বানরের জন্য প্রকল্প হলেও বাস্তবে সেখানে বানরের বসবাস বা খাদ্যসংস্থান নিশ্চিত হয়নি। বানরের জন্য নামমাত্র একটি শেড ও চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরি হলেও গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল আকারের সুইমিংপুল, বহুতল পানির ট্যাংক, তিন তলাবিশিষ্ট অফিস ভবন, চারটি পিকনিক স্পট ও অর্কিড হাউস।
চরমুগুরিয়া এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ মাহমুদ বলেন, ‘বানরের উৎপাতে মানুষ অতিষ্ঠ। সরকার দুই দফায় প্রায় ৬৫ কোটি টাকা খরচ করেছে, কিন্তু বানরের কোনো উন্নয়ন হয়নি। লাভবান হয়েছে শুধু ঠিকাদার।’
নয়ারচর এলাকার গৃহবধূ সালমা বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন বানর ঘরে ঢুকে খাবার নিয়ে যায়। যদি ইকোপার্কটা সত্যিই শেষ হতো, তাহলে আমরাও শান্তিতে থাকতাম, বানরগুলোকেও আশ্রয় দেওয়া যেত।’
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এ্যাড. মাসুদ পারভেজ বলেন, ইকোপার্কের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও বাস্তবে কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। পরিবেশ সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণী রক্ষার উদ্দেশ্যে নেওয়া এই প্রকল্প এখন দুর্নীতি ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
তবে হাসিনা সরকার পতনের পর পালিয়ে গেছে ঠিকাদার হাফিজুর রহমান যাচ্চু খান। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সামাজিক বন বিভাগের জেলা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান,‘ইকোপার্ক প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আল-নোমান বলেন, ‘এটি সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশবান্ধব প্রকল্প। অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’