বাসস
  ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ২০:০১

নেত্রকোণার হাওরে উৎপাদিত হাঁসের ডিমের চাহিদা সারাদেশে

হাঁসের ডিমের চাহিদা সারাদেশে। ছবি : বাসস

মো. তানভীর হায়াত খান

নেত্রকোণা, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ (বাসস) : হাওরাঞ্চলের খামারে দেশীয় পদ্ধতিতে উৎপাদিত হাঁসের ডিমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সারাদেশে। আর হাওরের খামারে উৎপাদিত হাঁসের ডিমের সবচেয়ে বাজার গড়ে উঠেছে নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলা শহরে। প্রতি বুধবার শহরের মহিলা কলেজ রোডে শেখ বাড়ির মোড়ে বসে এ বাজার। হাওরাঞ্চলে হাঁসের খামারে উৎপাদিত ডিম খামারিরা এ বাজারে বিক্রি করেন পাইকারি মূল্যে।

বর্ষাকালে যখন হাওরের ফসলি জমি পানির নিচে ডুবন্ত অবস্থায় থাকে তখন হাওরপারে যেসব গ্রাম রয়েছে সেসকল গ্রামের খামারিরা তখন দেশীয় পদ্ধতিতে হাঁস পালনে খামারে ব্যস্ত সময় পার করেন। এসব খামারে উৎপাদিত হাঁসের ডিম খামারিরা উপজেলা শহরের শেখ বাড়ির মোড়ে অবস্থিত হাঁসের ডিম বাজারে বিক্রি করেন। এ ছাড়াও মোহনগঞ্জের পাশ্ববর্তী সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর ও ধর্মপাশা থেকেও খামারিরা তাদের ডিম নিয়ে আসেন এ বাজারে।

এসব খামারে দেশীয় পদ্ধতিতে উৎপাদিত এ হাঁসের ডিম আকারে বড়, ভালো মানের এবং অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ হওয়ায় এ ডিমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সারাদেশে। পাইকাররা এ বাজারে এসে প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করে জেলা শহর, ময়মনসিংহ ও রাজধানী ঢাকার কাপ্তান বাজার  এবং তেঁজগাও বাজারসহ সারাদেশে সরবরাহ করে থাকেন। 

মোহনগঞ্জ উপজেলার কাজিহাটী গ্রামের লালন মিয়া তার খামারের হাঁসের ডিম নিয়ে এসেছিলেন শেখবাড়ির মোড়ের হাঁসের ডিম বাজারে। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার খামারে চারশত হাঁস রয়েছে, হাওরের ফসলি জমি পানির নিচে ডুবন্ত থাকায় তিনি চারমাস হাঁসের খামার করেন। আর এ চারমাসে তিনি মাসপ্রতি ত্রিশ হাজার টাকারও বেশি টাকা আয় করে থাকেন।

স্থানীয় ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, কাঁচা বাজারের ন্যায় এ বাজারে ডিমের দাম উঠানামা করে। রাজধানী ঢাকার সাথে সামঞ্জস্য করে নির্ধারণ করা হয় ডিমের দাম। খামারিরা প্লাস্টিকের ক্যারেটে করে শত শত ডিম নিয়ে আসেন এ বাজারে। দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি একশ ডিমের। 

খামারি এবং পাইকারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিশত ডিম বাজারের দামের তারতম্য অনুযায়ী ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকায় উঠানামা করে।

এ বাজারে পঁচিশ বছর ধরে ডিমের ব্যবসা করেন পাইকার তরিকুল ইসলাম। তিনি জানান, এ বাজারে হাওরাঞ্চলের হাঁসের খামারে উৎপাদিত প্রচুর ডিম আসে, সপ্তাহে দুই লাখের বেশি ডিম আসে এখানে। আমরা এখানে পনেরো থেকে বিশজন পাইকার আছি। আমি এখান থেকে পাইকারি দরে প্রতি সপ্তাহে ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার ডিম কিনে তা ঢাকার কাপ্তান বাজার, তেঁজগাও এবং খিলগাঁও বাজারে সরবরাহ করে থাকি। 

তরুণ উদ্যোক্তা ও হাঁসের খামারি মোহাম্মদ সাদ জানান, হাঁসের ডিমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সারাদেশে, আর তাই হাঁসের খামার করে তিনি বেশ লাভবান হয়েছেন। তবে অনেক সময় সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম কমিয়ে প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে সস্তায় কিনে তা বেশি দামে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে একটি অসাধু চক্র। প্রতি একশত ডিম বাজারে পাইকারি ১৫শ’ টাকা মূল্যে বিক্রি করতে পারলে খামারিদের খরচ বাদ দিয়ে ভালো লাভ হয়। কিন্তু দর যখন ১১শ’ থেকে ১২শ’তে উঠানামা করে তখন একেবারেই লাভ করতে পারেন না তারা।

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাদিকুল ইসলাম বাসসকে জানান, নেত্রকোণা জেলা একটি হাওরবেষ্টিত জেলা। এ জেলায় ডিমের অনেক উৎপাদন হয়ে থাকে, বিশেষ করে জেলার মোহনগঞ্জের উপজেলা শহর ও আদর্শনগরে দুটি ডিমের বড় বাজার রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে এ দুটি বাজারে দুই থেকে আড়াই লাখ ডিম বিক্রি হয়। আমরা খামারিদেরকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এসে জেলার এ বাজার থেকে ডিম সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, খামারিরা যেন ন্যায্য মূল্য পায় সেজন্য আমরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার মাধ্যমে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে আসছি। বাজারে খামারিদের অবিক্রীত ডিম সংরক্ষণে আমরা সরকারিভাবে একটি কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণের চেষ্টা করছি।

তিনি আরো জানান, জেলায় মোট ১০৫০ টি বাণিজ্যিক হাঁসের খামার রয়েছে। উপজেলা  প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে খামারিদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়াও হাঁসের লালন-পালন, রোগবালাই থেকে প্রতিকার, ভ্যাক্সিনেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রাণিসম্পদ দপ্তর নিরলসভাবে কাজ করছে। 

তিনি জানান, জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের নিবন্ধনকৃত বাণিজ্যিক খামার ছাড়াও জেলায় অনেক ছোট ছোট হাঁসের খামার রয়েছে। এসব খামারে খামারিরা দেশীয় পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে লালন-পালন করে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে ডিম উৎপাদন করে থাকেন। এসব ডিম জেলাসহ সারাদেশে সরবরাহের মাধ্যমে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এ জেলার খামারিরা।