বাসস
  ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:১৫

রাবি শিক্ষার্থীর গবেষণায় ডেঙ্গু ভাইরাসের নয়টি নতুন জিন শনাক্ত

রাজশাহী, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫(বাসস) : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের এক গবেষণায় ডেঙ্গু ভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়টি নতুন জিন শনাক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ভাইরাসটি প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে এমন তিনটি সম্ভাব্য ওষুধও নির্ধারণ করা হয়েছে।

গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন রাবি’র জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল লতিফ (২০১৮-২০১৯ সেশন)। গবেষণায় নতুন নয়টি জিন আবিষ্কার করেছেন তিনি। তাঁর সহযোগী হিসেবে গবেষণায় ছিলেন একই বিভাগের শিক্ষার্থী আল নোমান ও ফয়সাল আহমেদ। তাঁদের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান।

গবেষকরা জানান, ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জিনগত তথ্য বিশ্লেষণ করে নয়টি নতুন জিন-সিডিকে১, বিআইআরসি৫, টিওয়াইএমএস, কেআইএফ২০এ, সিসিএনবি২, সিডিসি২০, এইউআরকেবি, টিকে১ এবং পিটিইএন শনাক্ত করা হয়েছে। এসব জিন ভাইরাসের সংক্রমণ ও রোগের তীব্রতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে বলে ধারণা করা হয়েছে।

তাঁরা আরো জানান, এই জিনগুলোর জৈব-প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে সম্ভাব্য তিনটি ওষুধ এনট্রেকটিনিব, ইমাটিনিব এবং কুয়েটিয়াপিন নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

গবেষণায় আরো দেখা যায়, ভাইরাস সংক্রমণের ফলে শরীরে কিছু মাইক্রো আরএনএর পরিবর্তন ঘটে, যা ভাইরাস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষভাবে এমআই আর-১০৩এ -৩পি মাইক্রো আরএনএর প্রভাব ডেঙ্গু প্রতিরোধে আশাব্যঞ্জক ফল দেখিয়েছে।

ওষুধগুলো ভাইরাসকে সরাসরি নয় বরং মানবদেহের ভেতরে ভাইরাসের সহযোগী জিনগুলোকে টার্গেট করে, যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক ভিন্ন কৌশল।

আব্দুল লতিফ গবেষণার পাশাপাশি নিজের প্রতিষ্ঠিত অনলাইন গবেষণা শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম ‘স্টেটএক্স’-এর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তত্ত্বাবধায়ক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এই গবেষণার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাসের নতুন জিন ও সম্ভাব্য ওষুধ চিহ্নিত হওয়ায় ভবিষ্যতের চিকিৎসা কৌশল নির্ধারণে এটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

আব্দুল লতিফ বাসস’কে বলেন, ‘আমাদের এই গবেষণা ডেঙ্গু সংক্রমণের পেছনে জিনগত রহস্য উন্মোচন করেছে এবং হোস্ট-নির্ভর চিকিৎসা উদ্ভাবনে নতুন দ্বার খুলেছে। ভবিষ্যতে গবেষণার তথ্য ব্যবহার করে কার্যকর চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘কীভাবে মানবদেহে কোষের জিন নিয়ন্ত্রণ করে ভাইরাস নিজের প্রতিলিপি তৈরি ও সংক্রমণ বাড়ায়। সে বিষয়ে আমাদের এই আবিষ্কার ভবিষ্যতের হোস্ট-নির্ভর ওষুধ ও চিকিৎসা উদ্ভাবনের পথ দেখাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এছাড়াও এই তিনটি ওষুধ ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।’

গবেষণাটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে এবং সম্প্রতি ২০২৫ সালের ৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য জার্নাল ‘ পিএলওএস ওএনই’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গু সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে কয়েকশ’ মানুষ প্রাণ হারান। গবেষকরা আশা করছেন, এই গবেষণা দেশের ডেঙ্গু প্রতিরোধ কর্মসূচিকে বৈজ্ঞানিকভাবে আরো সমৃদ্ধ করবে।