বাসস
  ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:১৮

আসামিদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা পরিলক্ষিত হয়নি : চিফ প্রসিকিউটর

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ফাইল ছবি

ঢাকা, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : এতো বড় অপরাধ করেও আসামিদের মাঝে কখনোই কোনো অনুশোচনা রয়েছে এমনটা পরিলক্ষিত হয়নি বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে ট্রাইব্যুনালে উল্লেখ করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চলা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আসামি পক্ষের বক্তব্যের জবাব দেয়ার সময় আজ তিনি এ সব কথা বলেন।

এ সময় চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রের মধ্যে শেখ হাসিনা একটা সিভিল ওয়ার (গৃহযুদ্ধ) লাগানোর চেষ্টা করেছেন। সেনাবাহিনীকে বলার চেষ্টা করেছেন, তোমাদের অফিসারদের বিচার হয়, তোমরা কেন রুখে দাঁড়াচ্ছো না?

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, যারা এখানে আসামি হয়েছেন, তাদের (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান) মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। এত বড় অপরাধ করেছেন, দুনিয়ার সবাই জানে এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তিনিও জানেন। কিন্তু কখনোই তার মধ্যে কোনো ধরনের অনুশোচনা পরিলক্ষিত হয়নি। উল্টো তিনি যারা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তাদের হত্যা করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের  বাড়িঘর ধ্বংস করে দেওয়ার কথা বলছেন। তাদের  লাশগুলো বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়ার কথা বলছেন।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আরও বলেন, সর্বশেষে তিনি (শেখ হাসিনা) রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে গন্ডগোল লাগানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি সেনাবাহিনীকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সেনাবাহিনীকে বলার চেষ্টা করেছেন, তোমাদের অফিসারদের বিচার হয়, তোমরা কেন রুখে দাঁড়াচ্ছ না? রাষ্ট্রের মধ্যে একটা সিভিল ওয়ার (গৃহযুদ্ধ) লাগানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সেই পাতা ফাঁদে পা দেয়নি। বাংলাদেশের জনগণ সেই পাতা ফাঁদে পা দেয়নি। কোনো উসকানিতে কেউ পা দেয়নি।

অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সব পক্ষের বক্তব্য শেষে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ তিন জনের বিরুদ্ধে চলা মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলার রায়ের দিন নির্ধারণের জন্য আগামী ১৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

এই মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করেন। এছাড়া শুনানিতে প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ, শাইখ মাহদি, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। 

অন্যদিকে পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। আর রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একপর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

ঐতিহাসিক এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতিক শহীদ আবু সাঈদের পিতাসহ স্বজন হারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। সর্বমোট এই মামলায় ৫৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা হয়েছে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায়। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার চলছে।