বাসস
  ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:১৫

টাঙ্গাইলে ১৬০টি স্কুলে নির্মিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য প্লে-গ্রাউন্ড 

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের লেখাপড়া নিশ্চিত এবং ঝরে পড়া রোধে টাঙ্গাইলে স্কুল প্রাঙ্গণে নির্মিত হচ্ছে প্লে-গ্রাউন্ড। ছবি: বাসস

\ মহিউদ্দিন সুমন \

টাঙ্গাইল, ২১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের লেখাপড়া নিশ্চিত এবং ঝরে পড়া রোধে জেলার ১২টি উপজেলার ১৬০টি স্কুল প্রাঙ্গণে নির্মিত হচ্ছে প্লে-গ্রাউন্ড। 

জেলায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের আনন্দ ও বিনোদনের সাথে লেখাপড়া নিশ্চিত করা এবং স্কুল থেকে শিশুদেরকে ঝরে পড়া রোধে স্কুলে এসব প্লে-গ্রাউন্ড নির্মিত হচ্ছে। 

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ইতোমধ্যে ১২টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মাধ্যমে তাদের নিজ উপজেলার নির্ধারিত স্কুলগুলোতে মোট ১৬০টি প্লে-গ্রাউন্ড নির্মিত হচ্ছে। যার ফলে খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুদের আত্মবিশ্বাসী, দলবদ্ধভাবে কাজ করার দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনার সক্ষমতা ও দৃঢ় মানসিকতা সম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলতে এক অনন্য ভূমিকা পালন করবে। 

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি শিশু অমূল্য এবং সম্ভাবনাময়। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের পর্যাপ্ত বিনোদনের সুযোগ নেই অনেক ক্ষেত্রে। শিশুদের যত্নের সাথে বিকশিত হবার সুযোগ দিলে ভবিষ্যতে তাঁরা নিজেকে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে একটি দক্ষ ও সক্ষম জনগোষ্ঠী হিসেবে তৈরি হতে পারবে। আর সেই লক্ষ্যে "বিশ্বকে বদলে দিতে, বিকশিত হই আনন্দের সাথে" এ প্রতিপাদ্যে জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিশুদের ঝরে পড়া রোধ এবং শিশুদের আনন্দের সাথে পাঠদান সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে টাঙ্গাইলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন জেলা প্রশাসক শরীফা হক। 

টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ইতিমধ্যে ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্লে-গ্রাউন্ড স্থাপনে যে স্কুলগুলো নির্বাচন করা হয়েছে, সেগুলো হলো, করটিয়া খাগজানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পয়লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোদালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হুগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাগবাড়ি চৌবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বহুলি মাকোরকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুবর্ণতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাকতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঘিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খিদির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলিশাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেলধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আগবিক্রমহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড় বেলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খোর্দ্দযোগিনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে মিনি পার্কের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানা যায়। 

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীন মিয়া জানান, ইতোমধ্যে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্লে-গ্রাউন্ড স্থাপন করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের আনন্দের সাথে লেখাপড়া নিশ্চিত করতে এবং স্কুল থেকে শিশুদেরকে ঝরে পড়া রোধে নির্ধারিত প্রতিটি স্কুল প্রাঙ্গণে নির্মিত প্লে-গ্রাউন্ডে দোলনা, স্লাইড ও মানচিত্র থাকবে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের আরও প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাকে এই কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।

জেলা প্রশাসক শরীফা হক বাসস’কে জানান, শিশুদের আনন্দের সাথে বিকশিত হবার সুযোগ দিলে ভবিষ্যতে তাঁরা নিজেকে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে একটি দক্ষ ও সক্ষম জনগোষ্ঠী হিসেবে তৈরি হতে পারবে। এ ছাড়াও খেলাধুলা শিশুদের আত্মবিশ্বাসী, সৃজনশীল, টীম ওয়ার্ক, সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা বাড়ায় এবং দৃঢ় মানসিকতা সম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলে। তিনি বলেন, একই সাথে শিক্ষার্থীদের দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিটি স্কুলে বাংলদেশের মানচিত্র সম্বলিত ম্যুরাল নির্মাণেরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী প্রজন্মকে একটি আনন্দময় শৈশব উপহার দিতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।

তিনি আরো জানান, জেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং তাঁদের মেধার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটাতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের পরিবেশ সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে "একটি শিশু একটি স্বপ্ন ফুলের সাথে বিকশিত হোক আগামীর প্রজন্ম" এ প্রতিপাদ্যে জেলার ১ হাজার ৬২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ৩টি করে মোট ৪ হাজার ৬৯ টি দৃষ্টিনন্দন ফুলের গাছ (কৃষ্ণচূড়া, জারুল, সোনালু) রোপণ করেছেন জেলা প্রশাসক। যা ইতিমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে।