বাসস
  ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৫০

ঠাকুরগাঁওয়ে বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার উৎসব

ছবি: বাসস

মো. আসাদুজ্জামান আসাদ

ঠাকুরগাঁও, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): ঠাকুরগাঁওয়ের বুড়ির বাঁধে চলছে ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার উৎসব। প্রতিবছরের মতো এবারও সদর উপজেলার শুক নদের বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার উৎসবে মেতেছেন হাজারো মানুষ।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বাঁধের গেট ছাড়ার পর রাত ৮টা থেকে মাছ ধরতে নামেন তারা। গতকাল শনিবার ও আজ রোববার সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত চলছে মাছ ধরার উৎসব। অনেক রাত অবধি চলে এ উৎসব। ছপাৎ ছপাৎ পানির শব্দে মুখরিত হয় গোটা বুড়ির বাঁধ এলাকা। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাছ ধরছেন।

তবে কেউ যাতে অভয়াশ্রমে মাছ না ধরে সে বিষয়ে তৎপর আছে মৎস্য বিভাগ।

জানা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৯৫১-৫২ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে সেচ সুবিধার জন্য এই এলাকায় একটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতিবছর মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়। আর এ পোনাগুলোর দেখভাল করে আকচা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)।

সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি থেকে আসা মনোয়ার হোসেন ও আফজাল হোসেন বলেন, প্রতিবারই এখানে মাছ ধরতে আসি। বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক মানুষ মাছ ধরতে আসেন। সবাই মিলে মাছ ধরতে খুব ভালো লাগে। এটা আজকের দিনে একটা মেলায় পরিণত হয়েছে।

বালীয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল গ্রাম থেকে আসা রথিন্দ্র ও যতি মোহন বলেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে জাল দিয়ে মাছ মারছি। গতবার অনেক মাছ পেয়েছিলাম। এবারে তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। রিং জাল ব্যবহারের কারণে এবার মাছ কমেছে গেছে। আর মাছ কম পাওয়ায় মৎস্যজীবী, জেলে ও মৎস্যপ্রেমীরা হতাশা প্রকাশ করছেন।

মাছ ধরতে আসা স্থানীয় স্কুল শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ভোরে মাছ ধরতে এসেছি। মূলত আনন্দ-উল্লাসের জন্য প্রতিবার আসি। আজ রোববারও এসে সকাল থেকে মাছ ধরেছি। পুঁটি, শোল, শিংসহ প্রায় তিন কেজি দেশি মাছ পেয়েছি।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের উপসহকারী কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাফিউল বারী বলেন, ১৯৫১-৫২ সালের দিকে বুড়ির বাঁধ সেচ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়।

বাঁধটির সামনে একটি অভয়াশ্রম আছে। প্রতিবছর বাঁধের গেট ছাড়ার পর এখানে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। সবাই মিলে মাছ ধরেন। এর মাধ্যমে আমিষের চাহিদা পূরণ হবে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারো মাছ ধরা উৎসব শুরু হয়েছে। কেউ যাতে অভয়াশ্রমে মাছ না ধরে সে বিষয়ে তৎপর আছি। এই উৎসব ধরে রাখতে প্রতিবছর বুড়ির বাঁধ বিল এলাকায় মাছ ছাড়ে মৎস্য অধিদপ্তর।

সরেজমিনে দেখা যায়, কারও হাতে পলো, কারও হাতে চাবিজাল, খেয়াজাল, টানাজাল ও ছেঁকাজাল। যাদের মাছ ধরার সরঞ্জাম নেই তারাও বসে নেই। খালি হাতেই কাঁদার মধ্যে মাছ খুঁজছেন। মাছ ধরা দেখতে বাঁধের পাড়ে ভিড় জমিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এমন দৃশ্য গ্রাম-বাংলার চিরচেনা রূপের কথা মনে করিয়ে দেয়।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা জানান, মাছ ধরার উৎসবটি ঐতিহ্যবাহী ও সর্বজনীন। এখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ অংশ নেন। অবশ্য বাঁধে মাছ চাষে কিছুটা সমন্বয়হীনতা রয়েছে। তবে এ সমস্যার সমাধান করে বুড়ির বাঁধে আবার দেশী জাতের মাছ চাষ ও অভয়াশ্রম করার মাধ্যমে পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হবে ইনশাআল্লাহ।