বাসস
  ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৪৩

খুলনায় আয়বর্ধক কাজে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারীরা 

আয়বর্ধক কাজে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারীরা । ছবি : বাসস

খুলনা, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫(বাসস): খুলনা অঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় দরিদ্র পরিবারের নারীরা বিভিন্ন আয়বর্ধক কাজে যুক্ত হয়ে ভাগ্য বদল করেছেন।

খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের নলিয়ান গ্রামে ছনিয়া বেগমের একটি হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে। তিনি হাঁস ও মুরগি পালন করে সাফল্য অর্জন করেছেন এবং এখন স্বাবলম্বী।

ছনিয়ার স্বামী জেলে নান্টু গাজী বলেন, শিবসা নদীর ভাঙনের কারণে তাদের বাড়ি প্রায় প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও সরকারি সহযোগিতায় ছনিয়া সাফল্য অর্জন করেছেন।

ছনিয়া বলেন, প্রতি বছরই আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হই। নোনা পানি ঢুকে যায় কৃষিজমি ও হাঁস-মুরগির খামারে। অনেক হাঁস মারা যায়, মূলধন হারাতে হয়। তারপরও আমরা হাল ছাড়িনি, সফল হয়েছি। 

এখন আমরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল, সুখে সংসার চালাচ্ছি।

ছনিয়ার মতো দাকোপ উপজেলার সুতারখালী, কৈলাশগঞ্জ ও তিলডাঙ্গা এলাকার বহু নারী ধান, শাকসবজি, রবি ফসল ও মাছ যৌথভাবে চাষ করছেন। অধিকাংশ নারীই ধান, শাকসবজি ও মাছ চাষে সাফল্য পেয়েছেন এবং স্বাবলম্বী হয়েছেন।

যৌথভাবে ধান ও মাছ চাষ করা কৃষাণী শিউলী খাতুন বলেন, শুরুতে তিনি ভাবেননি এই পদ্ধতিতে তার আর্থিক অবস্থা পাল্টে যাবে।

তিনি বলেন, আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। মাত্র দুই বছরেই ধান ও মাছ একসঙ্গে চাষ করে ভালো আয় করছি। আমি, আমার স্বামী ও তিন সন্তান মিলে ধানক্ষেত ও চিংড়ি ঘেরে কাজ করি। যৌথ ধান ও চিংড়ি চাষ দারুণ একটি পদ্ধতি— এখানে অনেক নারী একসঙ্গে কাজ করে আয় করেন।

শিউলী খাতুন বলেন, শুধু আমি নই, আমার সহকর্মীরাও ভালো আয় করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তার জন্যই আমরা এখন সুখে আছি।

আরেক কৃষাণী পারভীন আক্তার বলেন, তিনি স্বামী সোলায়মান মিয়ার সহযোগিতায় যৌথভাবে ধান ও মাছ চাষ করে সংসার চালান।

তিনি বলেন, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে প্রায়ই ফসল ও মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু দুর্যোগের পর সরকারি সহায়তা আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সাহায্য করে।

পারভীনের মতে, দাকোপ উপজেলার শত শত নারীর ভাগ্য বদলে দিয়েছে ধান ও মাছ চাষ।

এছাড়া স্থানীয়ভাবে ‘সাম্মাম’ নামে পরিচিত তরমুজ চাষ দাকোপে নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

অনেক নারী এখন লাভজনক হওয়ায় ‘সাম্মাম’  চাষে ঝুঁকছেন।

তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বোতবুনিয়া গ্রামের মুক্তা বেগম ‘সাম্মাম’ চাষ করে সফল কৃষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ১৫ বছর আগে স্বামী হারানো এই বিধবা দুই বিঘা জমিতে ‘সাম্মাম’ চাষ করে ছয় সদস্যের পরিবার চালান।

তিনি বলেন, ১৫ বছর আগে স্বামী হারিয়েছি। চার সন্তানই এখনও পড়াশোনা করছে। তারা ‘সাম্মাম’ চাষে আমাকে সাহায্য করে। কারও কাছে হাত পাততে হয় না, সুখে আছি। এই সুখের কৃতিত্ব ‘সাম্মাম’ চাষের।

দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসমত হোসেন বলেন, উপজেলায় নারীরা বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছেন—এটি অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয়।

তিনি জানান, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে এবং উপজেলা কৃষি অফিসকে নারী কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ইউএনও বলেন, আমি আশা করি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে দাকোপ উপজেলা সফল গ্রামীণ নারীরা এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।

দাকোপ উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বঙ্কিম কুমার হালদার বাসসকে জানান, উপজেলার শত শত নারী উদ্যোক্তা হাঁস-মুরগি, ছাগল ও গরু পালন করে ভাগ্য বদল করেছেন।

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, যৌথভাবে ধান, শাকসবজি ও ফল (বিশেষত তরমুজ ও সাম্মাম) চাষ উপকূলের নোনাজল-প্রবণ এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতিতে পরিবর্তন এনেছে।

তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও শুধু পুরুষরাই জীবিকার জন্য কাজ করতেন। এখন নারী কৃষকরাও পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন—এটাই তাদের জীবনে সুখ ও সাফল্য এনেছে।