বাসস
  ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:৩২

পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম আজ

ঢাকা, ৪ অক্টোবর ২০২৫ (বাসস) : আজ পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম। ইসলামের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় ধর্মপ্রচারক ও দক্ষিণ এশিয়ায় সূফিবাদ প্রতিষ্ঠাকারী বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.)-এর মৃত্যু স্মরণে প্রতিবছর আরবি রবিউস সানী মাসের একাদশ তারিখে দিনটি পালিত হয়।

‘ফাতেহা’ বলতে প্রার্থনা বা প্রার্থনার অনুষ্ঠানকে বোঝায়। অপরদিকে ফারসি শব্দ ‘ইয়াজদাহম’-এর অর্থ এগারো। ‘ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম’ শব্দটির অর্থ দাঁড়ায়—একাদশ তারিখের প্রার্থনা, অর্থাৎ যেদিন হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) ইন্তেকাল করেছিলেন, সেই দিনের স্মরণে দোয়া ও মিলাদ।

বিশ্বব্যাপী সূফিবাদের অনুসারীদের কাছে দিনটি উর্দু ভাষায় ‘গেয়ারভি শরীফ’ নামেও পরিচিত। ওফাত বা ইহলৌকিক জীবনের অবসানের মাধ্যমে হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.)-এর মহান আল্লাহপাকের চিরসান্নিধ্য লাভের বার্ষিকী হিসেবে এদিনে বিশেষ প্রার্থনা, কুরআন তেলাওয়াত এবং দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। এর মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সূফিসাধক ও মুসলিম ধর্মের অনুসারীরা।

আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় ইসলামী পণ্ডিত হিসেবে পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন ফারসি ভাষাভাষী হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী, সুন্নি শেখ এবং কাদিরি সুফি তরিকার প্রতিষ্ঠাতা।

তিনি ৪৭০ হিজরি (১০৭৭ খ্রিস্টাব্দ) সালের রমজান মাসে পারস্যের গিলান জেলার নায়েফে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হযরত আবু সালেহ, যিনি হযরত আলী (রা.)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র ইমাম হাসান (রা.)-এর সরাসরি বংশধর এবং সাইয়্যিদা ফাতিমা (রা.)-এর বংশধর। তাঁর মা-ও ছিলেন একজন সাধিকা, সাইয়্যিদ আবদুল্লাহ সাওমাইয়ের কন্যা, যিনি হযরত আলী (রা.)-এর কনিষ্ঠ পুত্র ইমাম হুসাইন (রা.)-এর সরাসরি বংশধর।

শেখ আব্দুল কাদির জ্ঞান অর্জনের জন্য আঠারো বছর বয়সে নিজ বাড়ি ছেড়ে বাগদাদে চলে যান এবং জ্ঞানের মহান কেন্দ্রে অধ্যয়ন করেন। তিনি ৫৬১ হিজরির ১১ই রবিউস সানীতে নিরানব্বই বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন এবং বাগদাদে তাঁর মাদ্রাসার অভ্যন্তরে একটি মাজারে সমাহিত হন।

ইসলাম ছাড়াও তিনি সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শনসহ বহু বিষয়ের পণ্ডিত ছিলেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: গুনিয়াতুত তালেবীন (অন্বেষকদের সম্পদ), ক্বসীদায়ে গাউসিয়া, খামসাতা আশারা মাকতুবান (চিঠি সংকলন), আল-ফাতহ আর-রব্বানী (মহিমান্বিত প্রতিভাস), ফতহুল গায়েব (মূল্যবান বাণী) এবং কিবরিয়াত এ আহমার (জান্নাত-জাহান্নামের সংক্ষিপ্ত বিবরণী)।

আজ দেশের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন ফাতেহা পাঠ ও দোয়ার মাধ্যমে এই মহান ইসলাম প্রচারককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবেন। প্রতিবছরের মতো এবারও দিনটিকে যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালনের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নানা আয়োজন করেছে।

উল্লেখ্য, এ বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির এক সভায় আজ (শনিবার) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।