শিরোনাম
ইব্রাহিম খলিল মামুন
কক্সবাজার, ২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : উত্তাল সাগরে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে কক্সবাজার সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন দিলেন পূজার্থীরা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত চলে প্রতিমা বিসর্জন। প্রতিবারের মতো এবারও কক্সবাজার সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে কয়েক লাখ পর্যটকদের ঢল নেমেছে। বৈরী আবহাওয়া এবং বৃষ্টি কোন কিছুই থামাতে পারেনি দর্শনার্থীদের।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) উদয় শংকর পাল বলেন, এবারের প্রতিমা বিসর্জন উৎসবে তিন লাখ মানুষ উপস্থিত হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ হিন্দু ধর্মের। বাকি দুই লাখ পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দা। দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জন উৎসব হওয়ায় অনেকে দেখতে ছুটে এসেছেন কক্সবাজার সৈকতে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এবার জেলার ৯টি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভায় ৩১৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে জেলার উখিয়া, ঈদগাঁও, রামু ও সদর উপজেলার পিএমখালী, চৌফলদন্ডী, খুরুশকুল এলাকার প্রতিমা ট্রাকে করে শহরে আনা হয়। পরে পৌরসভার ১১টি মণ্ডপের প্রতিমাসহ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে নেওয়া হয়। বিকেল তিনটায় সৈকতের বিজয়মঞ্চে শুরু হয় আলোচনা সভা। বিকেল পাঁচটায় মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে সকল প্রতিমা বঙ্গোপসাগরে বিসর্জন দেওয়া শুরু হয়।
দুপুর দুইটার পর বিসর্জন অনুষ্ঠানকে ঘিরে কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ট্রাকে ট্রাকে আসতে শুরু করে প্রতিমা। তবে বৈরী আবহাওয়া বিশেষ করে বৃষ্টির কারণে সৈকতে প্রতিমা একটু দেরিতে নামানো হয়েছে। সৈকতের বালুচরে রাখা দুর্গা প্রতিমা ঘিরে চলে ভক্তদের শেষ আরাধনা। এসময় নাচে-গানে এক আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় সৈকতে।
বিসর্জনের আগে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে বিকেল ৪টায় শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান।
জেলা পূজা পরিষদের সভাপতি উদয় শংকর পাল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বক্তব্য দেন, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান, টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ, জেলা পুলিশ সুপার সাইফউদ্দীন শাহীন, বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল, শহর জামায়াতের আমীর আব্দুল্লাহ আল ফারুক।
এদিকে বৃহস্পতিবার সারা দিনই মেঘলা আকাশ আর ঝরঝরে বৃষ্টির দখলে ছিল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। বঙ্গোপসাগরের ঢেউও ছিল অস্বাভাবিক উঁচুতে। সেই সঙ্গে গর্জন তো আছেই। এই বৈরী পরিবেশও থামাতে পারেনি পর্যটকদের উচ্ছ্বাস। বৃষ্টিতে ভিজে, সৈকতের বালুচরের গড়াগড়ি ও হাঁটুপানিতে লাফালাফি সব মিলিয়ে উৎসবে মেতে ছিল সৈকত।
বিকেলে সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতের সুগন্ধার উত্তরে সিগাল-লাবনী থেকে দক্ষিণে কলাতলী পর্যন্ত চার কিলোমিটার জুড়ে পর্যটকদের উল্লাস। মেঘলা আকাশ, ঝোড়ো হাওয়া আর মৃত্যু ঝুঁকিপূর্ণ গুপ্তখাল-কোনো কিছুই ভ্রমণকারীদের আনন্দে ভাটা দিতে পারেনি।
ঢাকা থেকে আসা কলেজছাত্রী সিদরাতুল মুনতাহা বলেন, যখন বৃষ্টিতে ভিজেই সৈকতে নামছিলাম তাঁর কাছেই লাল নিশান উড়ছিল। বীচকর্মীরাও সতর্ক বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। তারপরও গোসলে নেমে পড়েছি। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেন পানিতে নেমেছেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লোনাজলে গোসল করতে এসেছি। ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেওয়া হয়েছি জানি, তবে কম পানিতে নেমেছি, কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তর কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ ও সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টির কারণে কক্সবাজার উপকূল উত্তাল হয়ে পড়েছে। কক্সবাজার উপকূলকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
সৈকতে পর্যটকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে সৈকতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। তবে দুর্গাপূজা উপলক্ষে চার দিনের ছুটিতে চার-পাঁচ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে। এর উল্লেখযোগ্য একটি অংশ প্রতিমা বিসর্জন উৎসব উপভোগ করবেন। সুন্দর ও নির্বিঘ্ন প্রতিমা বিসর্জন উৎসব সম্পন্ন হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, সৈকতের তিন স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পূজামণ্ডপগুলোতে র্যাব, সেনা, বিজিবি,পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও নজরদারি রাখা হয়েছে। সুন্দরভাবে বিসর্জন উৎসব পালিত হওয়ায় তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।