শিরোনাম
মোশররফ হোসেন
রাজবাড়ী, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বাসস): মহাষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে আজ জেলার ৪৩৫টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে। ঢাকের বোল, কাঁসর ঘণ্টা আর শাঁখের ধ্বনিতে মুখরিত হয়েছে উঠেছে প্রতিটি পূজামণ্ডপ। আগামী ২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এই দুর্গোৎসব।
রাজবাড়ী জেলা পুলিশ জানায়, জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলায় পূজা মণ্ডপের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ উপজেলায় ১৪৮টি, সদর উপজেলায় ১০৯টি, পাংশায় ৯৮টি, কালুখালীতে ৫৫টি এবং গোয়ালন্দে ২৫টি মণ্ডপে পূজা শুরু হয়েছে।
প্রতি বছরের মতই ঢাক, ঢোল, শঙ্খ বাজিয়ে নেচে গেয়ে বরণ করা হয়েছে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে। এবারও দেবী দুর্গাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত রাজবাড়ী জেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। দুর্গোৎসব উপলক্ষে পৌর শহরের প্রতিটি মণ্ডপ সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। প্রতিটি মণ্ডপেই প্রতিমা স্থাপন ও সাজসজ্জায় ভরপুর। দুর্গোৎসবকে ঘিরে সর্বত্র বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
গতকাল শনিবার সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় বোধন হয়েছে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে এই বোধনের মাধ্যমেই দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনাপূজা করা হয়। সে অনুযায়ী মণ্ডপে, মন্দিরে পঞ্চমীতে বন্দনাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। বোধন দুর্গাপূজার অন্যতম আচার। বোধন শব্দের অর্থ জাগরণ বা চৈতন্যপ্রাপ্তি। পূজা শুরুর আগে সন্ধ্যায় বেলশাখায় দেবীর বোধন দুর্গাপূজার একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। শরৎকালের দুর্গাপূজায় এই বোধন করার বিধান রয়েছে। বিভিন্ন পুরাণ অনুসারে ভগবান রামচন্দ্র শরৎকালে রাক্ষসরাজ রাবণকে বধের উদ্দেশ্যে দুর্গাপূজা করেন। তিনি অকালে এই বোধন করেন বলেই এটি অকালবোধন নামেও খ্যাত। তবে বসন্তকালে চৈত্র মাসে যে দুর্গাপূজা তথা বাসন্তীপূজা হয়, তাতে বোধন করার প্রয়োজন হয় না।
রাজবাড়ী পৌর এলাকায় বিনোদপুর, হরিসভা, সজ্জনকান্দা, নতুনপাড়াসহ শহরের বেশ কয়েকটি এলাকার পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেক মন্দিরের প্রবেশপথ থেকে পূজামণ্ডপ পর্যন্ত ঝলমলে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রতিটি মণ্ডপের সামনেই তৈরি করা হয়েছে আকর্ষণীয় গেট। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে সৌন্দর্য উপভোগ করছেন শিশু, কিশোর- কিশোরী এবং মধ্য বয়সি পুরুষ এবং নারীরা। বৃদ্ধরা আসেন সময়সুযোগ বুঝে। যখন ভিড় থাকে না। এতে শহরজুড়েই তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
আনসার অ্যাডজুটেন্ট উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন সরকার বাসসকে বলেন, আমরা পূজাকে নির্বিঘ্ন করতে জেলার সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করেছি। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০০০ আনসার ভিডিপি সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়াও জরুরিভাবে যে কোন সমস্যা মোকাবেলায় ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ রিজার্ভ রাখা হয়েছে।
মন্দিরের অবস্থান, জনসমাগম ও গুরুত্ব বিবেচনা করে মন্দিরগুলোতে ৬ জন, ৪ জন এবং ২ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নারী সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
রাজবাড়ি জেলা পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বাসসকে বলেন, আমাদের রাজবাড়ী জেলায় প্রতেকটি মন্দিরে আনসারের পাশাপাশি পুলিশের সার্বক্ষণিক টহল চলমান থাকবে।
দুর্গা পূজার সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, প্রতিটি মন্দিরে আমরা ৫০০ কেজি করে চাল দিয়েছি। আনসার, ভিডিপি, পুলিশ ছাড়াও আমরা জেলা ইমাম কমিটির সদস্যদের নিয়ে সভা করেছি। সেখানেও আমরা দুর্গা পূজায় নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছি।
তিনি জানান, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করতে প্রতিটি মন্দিরে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।