বাসস
  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:৩০

১৬ বছর পর ঠাকুরগাঁওয়ের রসিক রায় জিউ মন্দিরে দুর্গোৎসব

দীর্ঘ বিরতির পর ঠাকুরগাঁওয়ের রসিক রায় জিউ মন্দিরে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি চুড়ান্ত পর্যায়ে। ছবি : বাসস

।। জাকির মোস্তাফিজ মিলু।।

ঠাকুরগাঁও, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫(বাসস) : দেড় দশকেরও বেশি সময়ের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে অবশেষে ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহাসিক রসিক রায় জিউ মন্দিরে চলছে দুর্গাপূজার আয়োজন।

স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে দুই বিবাদমান পক্ষের সমঝোতায় মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে দীর্ঘদিনের জারি থাকা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে ১৬ বছর পর এবার এই ঐতিহ্যবাহী এ মন্দিরে দুর্গাপূজা আয়োজনের অনুমতি মিলেছে। মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যে পূজা শুরু হয়ে গেছে।

মন্দির সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার আউলিয়াপুরে শ্রী শ্রী রসিক রায় জিউ মন্দিরে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ইসকনপন্থী একটি পক্ষ ও অপর একটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সে সময় মন্দিরের সেবায়েত ফুলবাবু নিহত হন। এরপর থেকেই দুর্গাপূজার সময় মন্দির এলাকায় জারি ছিল প্রশাসনের ১৪৪ ধারা। 

১৬ বছর পর নিজস্ব মন্দির প্রাঙ্গণে পূজা অনুষ্ঠিত হতে চলায় ভক্ত এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মহাদেব রায় বলেন, ১৬ বছর আমরা নিজেদের মন্দিরে পূজা করতে না পারার কষ্ট নিয়ে অন্যের মন্দিরে পূজা করেছি। আমাদের সেই দীর্ঘদিনের মানসিক কষ্ট অবশেষে দূর হলো। আমরা এবার নির্ভয়ে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে পূজা উৎসব করতে চাই।

২২ বছরের যুবক তাপস রায় তার ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমার ছোটবেলায় শেষ পূজা হয়েছিল। বড় হওয়ার পর থেকে মন্দিরে তালা ঝুলতে দেখেছি। বাবার কাছে পূজার গল্প শুনে মন খারাপ হতো, এবার আমার সেই বহুদিনের ইচ্ছে পূরণ হয়েছে।

মন্দিরের সেবায়েত অপু সরকার জানান, ২০০৯ সালের সেই ঘটনা আমাদের হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল। দীর্ঘ অপেক্ষার পর আবার পূজা করতে পারছি, তাই আমরা আয়োজনে কোনো কমতি রাখছি না। 

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক মহোদয়ার উদ্যোগে উভয় পক্ষের নিজ নিজ অবস্থানে শান্তিপূর্ণ পূজা উদযাপনের সম্মতির ভিত্তিতে এই ঐতিহাসিক সমঝোতা হয়েছে। পূর্বের বিবাদমান দুই পক্ষের প্রতিনিধির ভিত্তিতে সদর এসি ল্যান্ডকে আহবায়ক করে কমিটি করে দেয়া হয়েছে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যাতে বাঁধাগ্রস্থ না হয়। 

পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ১৬ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে রসিক রায় জিউ মন্দিরে এবারের দুর্গোৎসব শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে বিশ্বাস করি।
জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা জানান, জেলা প্রশাসনের একান্ত প্রচেষ্টা এবং মধ্যস্থতায় দুপক্ষের সমঝোতায় ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আশা করছি, পূজার পরে তাদের মধ্যে বাকি সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে।