শিরোনাম
বিপুল আশরাফ
চুয়াডাঙ্গা, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : শরতের হিমেল হাওয়ায় জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে জেলা জুড়ে বইতে শুরু করেছে উৎসবের আমেজ। পূজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরিতে রং তুলি হাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা।
এরআগে, গত রোববার মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। অনেক মণ্ডপেই প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ। শুরু হয়েছে আলোকসজ্জা ও প্যান্ডেল তৈরির কাজ। চুয়াডাঙ্গা জেলায় এবার ১১২ টি মন্দিরে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার বড়বাজার সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মন্দিরে প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ। দক্ষ কারিগর দ্বারা মাটির প্রলেপ ও রং তুলির ছোঁয়ায় চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রতিমা গুলো। ধুমধাম করে চলছে আলোকসজ্জা ও প্যান্ডেল তৈরির কাজ। এ সময় ডেকোরেটর মালিক মো. হাসান আলী জানান, প্রতিবারের ন্যায় এবারও আমরা আলোকসজ্জা ও প্যান্ডেল তৈরির কাজ করছি। একলাখ টাকার ডেকোরেশন করা হচ্ছে এবার। গত ১৮তারিখ থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি, আশা করি ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখের মধ্যেই আমরা এ কাজ সম্পন্ন করতে পারব।
বড়বাজার সার্বজনীন দূর্গা মন্দির কমিটির দপ্তর সম্পাদক শ্যামল কুমার নাথ জানান বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও জাঁকজমকের সাথে বড়বাজার সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। এ পূজা মন্দিরে এবার ৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। তাছাড়াও প্রশাসনের তৎপরতা ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করছি আমরা। পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব- সদস্যরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং মন্দির পরিদর্শন করছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সহায়তাও পাচ্ছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বড়বাজার সার্বজনীন দূর্গা মন্দির কমিটির সদস্য সৌরভ সাহা সনি বলেন, প্রতিমা তৈরীর কাজ ইতোমধ্যেই শেষ করে ফেলেছেন প্রতিমা শিল্পীরা। ব্যাপক হারে আলোকসজ্জায় সুসজ্জিত হচ্ছে মন্দির প্রাঙ্গন। প্রতিমা তৈরিতে এবার ব্যয় হয়েছে একলাখ ২০হাজার টাকা। দূর্গাপূজা সম্পন্ন হতে আনুমানিক ৬ লাখ টাকার মতো ব্যয় হতে পারে। এই মন্দিরটি মূলত সরস্বতী পুজোর জন্য বিখ্যাত। তারপরও এই মন্দিরে ধুমধাম করে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হচ্ছে।
আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর থেকে আগত প্রতিমা তৈরীর কারিগর বিকাশ পাল জানান, প্রতিমা তৈরিতে মাটির কাজ শেষে রঙের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিমা তৈরিতে মূলত এটেল মাটি এবং আরো আনুষাঙ্গিক অনেক জিনিস ব্যবহৃত হয়। নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই প্রতিমা তৈরীর কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
দৌলতদিয়ার দক্ষিণ পাড়া বারোয়ারী দূর্গা মন্দিরের কোষাধ্যক্ষ অঞ্জন সাহা আবির বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও দুর্গাপূজা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। প্রতিমা তৈরির কাজ থেকে শুরু করে মণ্ডপ সজ্জা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক আয়োজন সবকিছুতেই আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এই পূজা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি সামাজিক সম্প্রীতি ও মিলনের উৎসবও বটে। প্রতিমা নির্মাণের দায়িত্বে থাকা পাবনার আমিনপুর থেকে আগত কারিগর উত্তম পাল জানান, প্রতিমা তৈরির কাজ কঠিন হলেও মানুষের আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখে তারা অনুপ্রেরণা পান।
মায়ের সাথে প্রতিমা বানানো দেখতে আসা ছোট্ট শিশু ছোয়াঁ জানায়, আমি মায়ের সাথে প্রতিমা তৈরি দেখতে এসেছি। দূর্গা মায়ের হাত, চোখ আর সাজ বানানো দেখতে খুব ভালো লাগছে।
দুর্গাপূজাকে ঘিরে চুয়াডাঙ্গার কাপড়ের দোকানগুলোতেও বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পুজোকে সামনে রেখে কেনাকাটায় ব্যস্ত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারের বি.এন বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী দেবীপ্রসাদ বাগলা জানান, গতবছরের তুলনায় এ বছর ক্রেতাদের ভিড় বেশি। দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী থেকে সপ্তমী পর্যন্ত এ ভিড় থাকতে পারে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে দোকানে এমন ভিড় থাকলেও পণ্যের দাম স্বাভাবিকই আছে।
তিনি আরো জানান, প্রতিবছর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গাপূজা উপলক্ষে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে কেনাকাটা করতে যায়। কিন্তু ভিসা জটিলতা থাকায় এইবার অনেকেই যেতে না পারায় বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলো থেকে কেনাকাটা করে নিচ্ছেন। এতে করে এ বছর কাপড়ের দোকান গুলোর ক্রেতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়, এবার জেলা ব্যাপী ১১২ টি মন্ডপে উদযাপিত হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩৫টি, দামুড়হুদা উপজেলা ২১টি, জীবননগর উপজেলায় ২৫ টি এবং সদর উপজেলায় ৩১ টি মন্ডপে পূজা উদযাপিত হবে। নিরাপত্তার জন্য পূজা মন্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সর্বদা টহল মোতায়ন থাকবে। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই প্রতিমা বিসর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আজান ও নামাজের সময় ঢাক ঢোল ও শব্দ সৃষ্টিকারী মাইক বন্ধ থাকবে। পূজা মণ্ডপের প্রবেশদ্বার বা রাস্তায় কোনো রকম দোকানপাট বসিয়ে যানজট সৃষ্টি করা যাবে না। পূজা মন্ডপের নিরাপত্তায় যথেষ্ট আলোকসজ্জা করতে হবে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে জেলাব্যাপী পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বিশেষ টহল লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা আর্মি ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফাহাদ আহমেদ আবির জানান, শারদীয় দুর্গাপূজার সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর টহল মোতায়ন থাকবে। যেকোনো অনাকাংক্ষিত ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সেনাবাহিনী কে জানাতে হবে।
জেলা পুলিশ জানায়, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১১২ টি পূজা মন্ডপ গুলোকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ এই তিন স্তরে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ টি মন্ডপকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ৪১টি মণ্ডপকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ৫৩টি মণ্ডপকে সাধারণ হিসেবে ধরা হয়েছে। অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ স্তরে যে মণ্ডপগুলোকে ধরা হয়েছে সেগুলোতে স্থায়ীভাবে দুইজন করে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। সাধারণ স্তরের আওতায় মন্ডপগুলোতে একটি করে পুলিশ সদস্য স্থায়ীভাবে মোতায়েন থাকবে। পূজা মন্ডপ গুলোর সকল তথ্য আদান-প্রদানে একটি মোবাইল টিম দ্বারা তিনটি মণ্ডপ কভার করতে সক্ষম, জেলাব্যাপী এমন মোট ৩৮ টি মোবাইল টিম মাঠে থাকবে। বড় যে কোন পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৫ টি স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সুষ্ঠুভাবেই শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে। কেউ যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্যে প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে থাকবে। সকলকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে। মন্ডপে যে কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।