শিরোনাম
।। দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ।।
কুমিল্লা, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বাসস): শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে কুমিল্লার বিপণিবিতানগুলো এখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠেছে। এবারের পূজার বাজারে বিশেষ নজর কাড়ছে দেশীয় কাপড়। সীমান্তবর্তী জেলা কুমিল্লায় প্রতিবছর ভারতীয় কাপড়ের আধিপত্য থাকলেও এবার দেশীয় শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজ বাজার দখল করে নিয়েছে।
নগরীর কাপড়িয়াপট্টি, মনোহরপুর, কান্দিরপাড়, ক্যান্টনমেন্ট থেকে শুরু করে বরুড়া, লাকসাম, মুরাদনগর, মনোহরগঞ্জসহ উপজেলার হাটবাজারগুলোতে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে। উৎসবের আমেজে নারী, পুরুষ ও শিশুদের ঢল নামছে দোকানপাটে।
দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারে পূজার বাজারে মেয়েদের শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। কুমিল্লার খাদির শাড়ি, বাটিকের কাপড়, রাজশাহীর সিল্ক, কাতান, জর্জেট ও এমব্রয়ডারি করা শাড়ি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি টাঙ্গাইলের তাঁত ও জামদানিও বিশেষ কদর পাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতীয় কাপড়ের জোগান কম থাকায় দেশীয় কাপড়ই এ বছর বাজারের মূল ভরসা হয়ে উঠেছে।
মনোহরপুরের ব্যবসায়ী নিতাই চন্দ্র দাস বলেন, গত দুই বছর নানা কারণে ব্যাবসা মন্দা ছিল। এবারের পূজা সামনে রেখে বিক্রি অনেক ভালো। দেশি জামদানি, সিল্ক, কাতান শাড়ির চাহিদা বেশি। মানুষ গরমের কারণে হালকা ও আরামদায়ক পোশাকই বেশি নিচ্ছেন।
কাপড়িয়া পট্টির আনিলা শাড়ি দোকানের স্বত্বাধিকারী কিষান জানান, এবারের পূজায় দেশীয় কাপড়ই প্রধান আকর্ষণ। জর্জেট, রাজশাহী সিল্ক, কাতান, খাদি, বাটিকসহ সব ধরনের দেশি কাপড়ের চাহিদা অনেক বেড়েছে। ভারতীয় কাপড়ের জোগান নেই বললেই চলে। দাম কিছুটা বাড়লেও ক্রেতাদের আগ্রহ কমেনি।
কাপড় কিনতে আসা গৃহবধূ মিতা দাস বলেন, পূজা মানেই নতুন পোশাক। ছেলে- মেয়েদের নতুন জামাকাপড় ছাড়া পূজার আনন্দ হয় না। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটা করছি।
কিউআর টাওয়ারে কেনাকাটা করতে আসা বর্ণীতা দাস তরী বলেন, সকালে পূজা-অর্চনার জন্য সাধারণত খাদি বা বাটিকের শাড়ি পরি। বিকেলে মণ্ডপে যাওয়ার জন্য বাহারি পোশাক কিনি। এবার বিভিন্ন দোকানে ছাড় থাকায় গত বছরের তুলনায় কম দামে কিনতে পারছি।
নগরীর বাদুরতলা এলাকায় কেনাকাটা করতে আসা নেহাল কুমার দাস রিপন বলেন, দুর্গাপূজা আমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। তাই পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করি। এবার দাম কিছুটা বেশি হলেও দেশি কাপড়ের মান ভালো হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট।
শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের পোশাক নয়, শিশুদের জন্যও রয়েছে বিশেষ আয়োজন। ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজায় খেলনা কিনতে আসা অভিভাবক সুজিত সাহা বলেন, আমার মেয়ে পূজার সময় নতুন পুতুল ছাড়া খুশি হয় না। তাই কয়েকটা খেলনা কিনলাম। শহরের বাজারগুলোতে খেলনা, ফ্যান্সি ড্রেস ও শিশুদের জুতা বিক্রি হচ্ছে দেদারসে।
শাড়ির সঙ্গে মানানসই গয়না ও প্রসাধনীর চাহিদাও রয়েছে। নগরীর রাজগঞ্জ এলাকার দোকানদার ফরহাদ হোসেন বলেন, নারীরা পূজার দিনে নতুন শাড়ির সঙ্গে গয়না কিনতে বেশি আগ্রহী। সোনার দুল, চুড়ি, টিপ, কৃত্রিম চেইন ভালো বিক্রি হচ্ছে।
চকবাজার, কাপড়িয়াপট্টি, রাজগঞ্জ, কান্দিরপাড় হকার্স মার্কেটে নিম্নবিত্তদের ভিড় বেশি। মাঝারি মানের বিপণিবিতানগুলোতে কেনাকাটা করছেন মধ্যবিত্তরা। আর বাদুরতলা কিউআর টাওয়ার, আধুনিক শপিং মল ও ব্র্যান্ড শপগুলোয় ভিড় করছেন বিত্তবান ক্রেতারা। সব শ্রেণির মানুষই নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটা করছেন।
বাংলাদেশে দুর্গাপূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। প্রতি বছরের মতো এবারও কুমিল্লা জেলায় কয়েক হাজার পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজার আগাম প্রস্তুতি নিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এখন বাজারমুখী। পোশাকের পাশাপাশি গৃহসজ্জার সামগ্রী, প্রসাধনী, কসমেটিকস, কৃত্রিম গয়না ও অলংকার কেনার ধুম লেগেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দিনের বেলায় ক্রেতাদের আনাগোনা তুলনামূলক কম হলেও বিকেল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত দোকানে ভিড় থাকে। এবারের পূজা সামনে রেখে দোকানগুলোতে বাহারি মালামাল তোলা হয়েছে। অনেক শোরুমে চলছে বিশেষ ছাড়। যা ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে।
শুধু শহর নয়, গ্রামীণ হাটবাজারগুলোও জমজমাট হয়ে উঠেছে। মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার, চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার, লাকসামের দৌলতগঞ্জেও প্রতিদিন ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। কাপড়, খেলনা, জুতা, মিষ্টান্নসহ নানা পণ্য কেনায় ব্যস্ত সবাই।
কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মন্জুরুল আলম ভূইয়া বলেন, পূজা উপলক্ষে কুমিল্লার সব দোকানপাট শুক্রবারেও খোলা রাখা হচ্ছে। ক্রেতাদের নিরাপত্তায় প্রতিটি বিপণিবিতানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও তদারকি করছেন, যেন সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের পূজার বাজার অনেক জমজমাট হবে বলে আমরা আশা করছি। ভারতীয় কাপড়ের আধিপত্য না থাকায় স্থানীয় উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে শঙ্কা ছিল, কিন্তু তা কেটে গেছে। এখন ক্রেতার ভিড় ও বিক্রি দুটোই বাড়ছে।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী হয়ে ১ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে উৎসব। পূজার দিনগুলোতে কুমিল্লার প্রতিটি মণ্ডপে চলবে আরতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রসাদ বিতরণ ও ভক্তদের সমাগম। শেষ দিন পর্যন্ত কেনাকাটার এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা।