শিরোনাম
বাবুল আখতার রানা
নওগাঁ, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দরজায় কড়া নাড়ছে দুর্গাপূজা। মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। ইতোমধ্যে মন্দির ও মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে রং এর কাজ। এছাড়া দুর্গা উৎসব উপলক্ষে জেলায় জমে উঠেছে কেনাকাটা। বিপণিবিতানগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে বিক্রেতাদের।
এবার জেলার ১১ উপজেলা ও ৩ পৌরসভায় অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা। এর মধ্যে জেলা সদরের আলুপট্টি, কালীতলা, পুরাতন ডিসি অফিস, মান্দার মৈনম, দেলুয়াবাড়ী, রাণীনগর উপজেলার হাটখোলা অন্যতম। এরই মধ্যে প্রতিমা সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। কেউ দেবীকে রাঙ্গাতে, আবার কেউ অন্য সাজ সজ্জায় ব্যস্ত। কেউ আবার প্রতিমার শরীর জুড়ে রং মেশাচ্ছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। যেন তাদের দম ফেলার সময় নেই।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ৬ষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এই উৎসব। তাই দেবীদুর্গাকে পরিপূর্ণ রুপ দিতে চলছে শেষ মূহুর্তের ব্যাপক প্রস্তুতি। শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব উদযাপনের আশায় জেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন পূজামন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, কাঁদা-মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিল তিল করে তৈরি করেছে দেবীদূর্গার প্রতিমা। রাত-দিন শক্ত মাটি নরম করে দেবী দুর্গার সাথে নিপুণ হাতে গড়ে তোলা হয়েছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী আর অসুরের প্রতিমা। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ এখন দেবীদুর্গাকে পরিপূর্ণ রুপ দিতে রং তুলির আঁচড়ে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। স্থানীয় শিল্পী ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শিল্পীরা রং তুলিতে জানান দিচ্ছেন তাদের হাতের নৈপুণ্য। অন্যদিকে প্রতিমার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র মেরামত ও তৈরী করতে ব্যস্ত ঢাক-ঢোল, কাঁশি ও বাঁশির কারিগররা। এছাড়া মণ্ডপগুলোতে চলছে সাজসজ্জার প্রস্তুতি।
জেলার মহাদেবপুর উপজেলার কুঞ্জবন এলাকায় প্রতিমা তৈরি করছেন মাঠো কর্মকার নামে এক কারিগর। তিনি বলেন, এবার প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। লাভ কম হলেও বাপ দাদার পেশাকে তো নষ্ট করতে পারি না। তাই হাল ধরে আছি দীর্ঘ ২০ বছর।
মান্দা উপজেলার মৈনম বাজারে প্রতিমা তৈরি করছেন রঞ্জন কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, এবার আপনার সামনে যেই প্রতিমাটি তৈরি করছি এটার দাম দেড় লাখ টাকা হওয়ার কথা কিন্তু ১ লাখ টাকা দিয়ে বানাচ্ছি। আমার দাদার দাদা এ কাজ করতেন। আমিও করি। মাটির কাজ শেষ হয়েছে এখন রং তুলির কাজ করছি।
এদিকে দুর্গাপূজা ঘিরে জমজমাট জেলার বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংসেন্টারগুলো। নারীদের শাড়ি, কামিজ, থ্রি পিসসহ পুরুষদের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া ও শিশুদের জন্য বাজারে রয়েছে নানা ধরনের পোশাক। এ সব পোশাক কিনতে মার্কেটগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। এছাড়া প্রসাধনী ও জুতার দোকানেও ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রেতারা।
নওগাঁ শহরের গিতাঞ্জলী শপিং কমপ্লেক্স এর সুষমা কাপড় বিতানের স্বত্বাধিকারী সুষমা রানী বলেন, পূজা উপলক্ষে কেনাকাটার ধুম পড়েছে। প্রতিদিন লাখ টাকার উপরে কেনাবেচা হচ্ছে। বসে থাকার সময় নেই। পূজার দিন যত কাছে আসবে বিক্রি তত বাড়বে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট নওগাঁ জেলা শাখার সদস্য সচিব সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ৬ষ্ঠী তিথিতে শুরু হবে এ পূজা উৎসব। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতায় পূজা সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকলের কাছে প্রত্যাশা দর্শনার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে প্রতিমা দর্শন করতে পারেন এবং সকলেই যেন উৎসবমুখর পরিবেশে পূজার আনন্দ উপভোগ ও উদযাপন করতে পারে।
নওগাঁর পুলিশ সুপার সাফিউল সারোয়ার জানান, উৎসব শান্তিপূর্ন ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রতিটি পূজামণ্ডপসহ আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। শহরের প্রধান মণ্ডপ ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে যানজট এড়াতে বিশেষ ট্রাফিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি মণ্ডপে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে পৃথকভাবে গঠিত মনিটরিং সেল উৎসব পর্যবেক্ষণে সক্রিয় থাকবে।
তিনি জানান, এবার জেলায় ৭৯৯ মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলায় ৬৬টি, নওগাঁ পৌরসভায় ৫৯টি, মহাদেবপুরে ১৫২টি, মান্দায় ১১৮টি, বদলগাছীতে ১০৩টি, পত্নীতলায় ৭৮টি, নিয়ামতপুরে ৫৮টি, আত্রাইয়ে ৫১টি, রানীনগরে ৪৭টি, ধামইরহাটে ৩২টি, সাপাহারে ১৮টি, ও পোরশা উপজেলায় ১৭টি মণ্ডপে পূজা উদযাপিত হবে।