বাসস
  ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩:৩২

কুয়াকাটায় প্লাস্টিক বর্জ্য রোধে সচেতনতা সেমিনার

ছবি : বাসস

পটুয়াখালী, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বিশ্ব পরিচ্ছন্নতা দিবস-২০২৫ উপলক্ষে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় ‘টেকসই প্লাস্টিক ব্যবহার ও সামুদ্রিক বর্জ্য প্রতিরোধে সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক এক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ শনিবার বিকেলে কুয়াকাটার হোটেল খান প্যালেস কনফারেন্স হলে পরিবেশ অধিদপ্তর, বরিশাল বিভাগ এই সেমিনারের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশালের পরিচালক মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিডো-র জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়ক সত্য ভট্টাচার্য, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর কবির, কলাপাড়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক মো. ইয়াসিন সাদেক, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী সুমনসহ বিভিন্ন সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি তার বক্তব্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ও পলিথিনের ভয়াবহ পরিবেশগত ক্ষতি এবং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছাড়া পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব নয়।

সত্য ভট্টাচার্য ‘স্ট্রাইভ ফর ফাইভ’ ধারণা তুলে ধরে বলেন, প্রত্যেক নাগরিক যেন অন্তত পাঁচজনকে প্লাস্টিক দূষণ বিষয়ে সচেতন করেন এবং সেই পাঁচজন আরও পাঁচজনকে উৎসাহিত করেন—এই ধারায় একটি বিস্তৃত সচেতনতা আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব। তিনি জানান, ইতোমধ্যে সারা দেশে প্রায় ৭০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক এ কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন।

উপকূল পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন (উপরা)-এর আহ্বায়ক একেএম বাচ্চু তার বক্তব্যে কুয়াকাটার পরিবেশগত সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ডলফিন মারা যাওয়া, নদীর মোহনায় প্লাস্টিক জমা হওয়া এবং খাল ভরাট হয়ে যাওয়া উপকূলের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। তিনি অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

কুয়াকাটা হোটেল ও মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম মোতালেব শরীফ আতিথেয়তা খাতে কর্মরতদের পরিবেশবান্ধব প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। 

তিনি বলেন, হোটেল-রিসোর্ট খাতে কর্মরতরা পরিবেশের প্রতি সচেতন হলে পর্যটন শিল্পে পরিবেশ রক্ষার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সম্ভব।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘প্লাস্টিক সস্তা ও সহজলভ্য হলেও এটি আসলে বিষের মতো। এটি শুধু পরিবেশ নয়, মানবজাতিকেও চরম বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’

তিনি স্থানীয় জনগণ, প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবীদের সম্মিলিতভাবে প্লাস্টিক দূষণ রোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আজ মানবদেহ থেকে শুরু করে জলজ প্রাণী এবং মায়ের গর্ভে থাকা শিশুর শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। এটি প্রমাণ করে, প্লাস্টিক দূষণ এক ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’

সেমিনারে উপস্থিত বক্তারা মনে করেন, কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষায় টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এজন্য স্থানীয় জনগণ, প্রশাসন, এনজিও এবং ব্যবসায়ী সমাজকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সকলের সম্মিলিত উদ্যোগই পারে উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষা করতে।