শিরোনাম
ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ নিজেদের সহনশীলতা বৃদ্ধির কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর অর্থ বিভাগে ‘ইনক্লুসিভ বাজেটিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিং ফর ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স’ (আইবিএফসিআর) প্রোগ্রামের দ্বিতীয় পর্যায় (আইবিএফসিআর-২) চালু করেছে।
মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচিটি চালু করা হয়। এই পর্যায়ের লক্ষ্য জলবায়ু ঝুঁকি থেকে দেশকে রক্ষা করা। ইতোমধ্যেই প্রতি বছর প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে।
সকালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ২০২৪ সালে রেকর্ড ১.৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। যার সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশে। অথচ বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান মাত্র ০.৫৬ শতাংশ।
প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়ে দেশের জিডিপির ০.৭ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। আবার ২০৪০ সালের মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি উৎপাদন ১৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে, ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসনের কারণে ১ কোটি ৩৩ লাখ বাংলাদেশি বাস্তুচ্যুত হতে পারে।
প্রতি বছর জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থাৎ ১২.৫ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি পূরণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফাইন্যান্স ডিভিশন, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা-এএফডি’র সহায়তায় কর্মসূচির দ্বিতীয় ধাপের (আইবিএফসিআর-২) উদ্বোধন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ বিভাগ সচিব ড. মোঃ খায়েরুজ্জামান মজুমদার। সভাপতিত্ব করেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বিলকিস জাহান রিমি। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ইউএনডিপি’র রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ স্টেফান লিলার এবং এএফডি’র ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর সিসিলিয়া কর্টেসে। স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. নাজরুল ইসলাম এবং ধন্যবাদ জানান যুগ্ম সচিব মুহাম্মদ আবুল কাসেম।
ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিক উষ্ণায়নে অতি সামান্য অবদান রাখলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি আমাদেরই ভোগ করতে হচ্ছে। আমরা অভিযোজনমূলক কর্মসূচি ও প্রতিকারমূলক পদক্ষেপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি বিশ্বাস করি, আইবিএফসিআর-এর দ্বিতীয় ধাপ আমাদের জনগণ ও অর্থনীতির জন্য আরও শক্তিশালী স্থিতিশীলতা গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
তিনি আরও বলেন, গত বছর প্রণীত ও সংশোধিত জলবায়ু পরিবর্তন কর্মপরিকল্পনা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনায় রোডম্যাপ হিসেবে কাজ করছে এবং কার্যকর সম্পদ আহরণে সহায়তা দিচ্ছে।
বিলকিস জাহান রিমি বলেন, কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় ও অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয়ের শক্তিশালী কাঠামো প্রয়োজন। সহযোগিতা বাড়ানো ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার করা গেলে জলবায়ু অগ্রাধিকারগুলো সরকারি আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে পূর্ণাঙ্গভাবে যুক্ত করা সম্ভব হবে।
স্টেফান লিলার বলেন, ‘আইবিএফসিআর-২’ মূলত জলবায়ু অগ্রাধিকারকে সরকারি অর্থ ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসছে। যেখানে ব্যয় করা প্রতিটি টাকা মানুষের জীবনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারে। ইতোমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সিসিলিয়া কর্টেসে বলেন, ‘আইবিএফসিআর-২’ একটি কারিগরি সহায়তা কর্মসূচি, যা ৩০ কোটি ইউরোর নীতিনির্ভর ঋণ কর্মসূচির সম্পূর্ণ পরিপূরক। এই ঋণ বাংলাদেশ সরকারের জলবায়ু কৌশল ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
টেকনিক্যাল অধিবেশনে ইউএনডিপি’র প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট ড. মালিহা মুজাম্মিল আইবিএফসিআর ফেজ-টু’র রোডম্যাপ উপস্থাপন করেন।
আলোচক হিসেবে ছিলেন, পিকেএসএফের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ এবং সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
‘বাংলাদেশে জলবায়ু-সচেতন সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. জিয়াউল আবেদীন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম সোহেল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম, ইউএনডিপি’র কান্ট্রি ইকোনমিক অ্যাডভাইজার ওওয়াইস পাররাই, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাসানুল মাতিন এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুসরাত মেহ্ জাবীন।
আইবিএফসিআর ফেজ-টু প্রথম ধাপের অভিজ্ঞতার আলোকে জলবায়ু অর্থায়নের কাঠামো হালনাগাদ, অর্থায়ন পর্যবেক্ষণ জোরদার এবং জাতীয় জলবায়ু অর্থায়ন কৌশল প্রণয়ন করবে। পাশাপাশি স্থানীয় অভিযোজন কর্মপরিকল্পনা (লাপা) ও জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিভিআই) ব্যবহারকে উৎসাহিত করবে যাতে অর্থ সহায়তা সরাসরি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায়।
কর্মকর্তারা জানান, এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাজেট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সমন্বয় বৃদ্ধি পাবে।
পাশাপাশি বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থাকে প্যারিস চুক্তি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি), জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) এবং জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হবে।
এছাড়াও সরকারি অর্থ ব্যবস্থার মূল কাঠামোয় জলবায়ু সহনশীলতা অন্তর্ভুক্ত করে দেশটি উন্নয়ন অর্জন সুরক্ষিত করবে এবং জনগণকে বাড়তি জলবায়ু ঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে।