শিরোনাম
ঢাকা, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫(বাসস) : প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের অগ্রযাত্রা থেকে সরে আসা বা পিছিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, কারণ বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই সে পথে অগ্রসর হচ্ছে।
শনিবার রাজধানীতে অর্থনৈতিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিজিএমইএ সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি (বিএপিআই)-এর সিইও মো. মুস্তাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময় আগের সরকারের রেখে যাওয়া অর্থনীতি ছিল একেবারে ‘আইসিইউ’তে, যখন প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছিল।
তিনি বলেন, তবে সময়ের সাথে সাথে প্রবাসী আয় ও সরকারের সঠিক নীতির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে।
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সময়সীমা ২০২৬ সালের পরেও পেছানো হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া তার এখতিয়ারে পড়ে না।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সাধারণত কোনও সরকারই কোনও বড় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় না। তবে বেসরকারি খাত চাইলে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মাধ্যমে এলডিসি থেকে উত্তরনের সময় বাড়ানোর জন্য লবিং শুরু করতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন নিয়ে সরকারের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে এবং বেসরকারি খাতকে আরও ভালো করার জন্য ঝুঁকি নিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘তাদের (বেসরকারি খাত) ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্য রেখে গবেষণা কার্যক্রমকে সমৃদ্ধ করার জন্য বিজিএমইএকে পরামর্শ দিয়ে আলম বলেন যে, এই ধরনের উদ্যোগ পোশাক শিল্পের নেতাদের বিশ্ব বাজারকে আরও ভালভাবে বুঝতে এবং পর্যবেক্ষণ করতে সহায়তা করবে।
প্রেস সচিব আরও বলেন, জাপান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ার মতো দেশের সঙ্গে চুক্তি করা সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আগের সময়ের তুলনায় এখন অর্থনীতির কিছু ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে।
তিনি বলেন, কিছু অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশের অন্তত আরও তিন বছর সময় দরকার।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পথে আছে এবং এটি হওয়া উচিত। তবে তিনি মনে করেন, এটিকে পিছিয়ে দেওয়ার বিশেষ প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে বাংলাদেশ পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এখনো আমদানি নির্ভর, কৃষি খাত আমদানি করা সার ও কীটনাশকের ওপর নির্ভরশীল।
তিনি সতর্ক করেন, আগের সরকারের তথ্য জালিয়াতির বিষয়টিই শুধুমাত্র গ্র্যাজুয়েশন পেছানোর যুক্তি হিসেবে যথেষ্ট হবে না। বরং বিস্তৃত সামষ্টিক অর্থনৈতিক দুর্বলতাগুলো দেখাতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১১ সাল থেকে আমদানি নির্ভর জ্বালানি সংকটে আছি, আর এটি এক রাতের মধ্যে সমাধান সম্ভব নয়।’
বিজিএমইএ সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন থেকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই। তবে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় নিয়ে তারা ইতিমধ্যে আরও তিন বছরের সময় চেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি আমাদের রপ্তানি খাত প্রস্তুত নয়। যদি আমরা মোট ছয় বছরের সময় পাই, অর্থাৎ ২০৩২ সাল পর্যন্ত, তবে আমরা দক্ষ জনবল তৈরি করতে পারব, দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব এবং ক্রেতাদের সঙ্গে সফলভাবে আলোচনা করতে পারব। তখন ভালো ফল পাওয়া সম্ভব হবে।’
তিনি রপ্তানির বাজার ও পণ্যে বৈচিত্র্য আনার ওপর জোর দেন এবং বলেন, সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারকে একসাথে কাজ করতে হবে। ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভর্তুকি ও প্রণোদনাও প্রয়োজন।
বিএপিআই সিইও মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, দক্ষ জনবল তৈরি এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। যাতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরেও এই খাত বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক থাকতে পারে।