বাসস
  ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:০০

গণিতের নতুন সূত্র আবিষ্কারের দাবি জবি’র সাবেক শিক্ষার্থীর

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মো. আমিনুর রহমান। ফাইল ছবি

ঢাকা, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : গণিতের নতুন একটি সূত্র আবিষ্কারের দাবি করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাবেক শিক্ষার্থী মো. আমিনুর রহমান। তিনি দাবি করেন, গবেষণায় প্রাপ্ত এ সূত্র দিয়ে 'Interval Table Method'  নামে একটি নতুন টেকনিক বের করা হয়েছে, যা দিয়ে পাওয়ার-সাম বের করার একটি সম্পূর্ণ নতুন উপায় পাওয়া গেছে।

তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা।

সুইজারল্যানডের বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান সিইআরএন পরিচালিত জেনোদো’তে তিনি তার গবেষণালব্ধ সূত্রটি প্রকাশ করেন। জেনেদো হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় Open Research Repository। গত বুধবার  সূত্রের চূড়ান্ত পেপারটি প্রকাশিত হয় এবং সূত্রটি তার নামে লাইসেন্স হয়। তিনি চেষ্টা করছেন সূত্রটি আরো বড় জার্নালে প্রকাশ করার।

নিজের আবিষ্কার সম্মন্ধে আমিনুর রহমান বলেন, আমি পাওয়ার সাম অর্থাৎ 1^p + 2^p + 3^p • • • + n^p  নির্ণয়ের জন্য একটি সরাসরি সূত্র আবিষ্কার করেছি। আগে এই ধরনের সমস্যার সমাধানে Bernoulli সংখ্যা ও Stirling সংখ্যা ব্যবহার করতে হতো, যা ছিল অত্যন্ত জটিল। আমার পদ্ধতিতে সেই জটিলতা নেই - শুধু p = 1, 2, 3, 4, 5, . . .  ইত্যাদি বসালেই সহজে ফলাফল পাওয়া যায়। এটি ঋধঁষযধনবৎ-এর সূত্রের মতোই সঠিক ফলাফল দেয়, তবে শেখা ও ব্যবহার অনেক বেশি সহজ।

তিনি আরো বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি অত্যন্ত গবেষণামনস্ক ছিলাম। স্কুলের পড়াশোনা বাদ দিয়ে সারাদিন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণায় ব্যস্ত থাকতাম। ২০১৪ সালের শেষের দিকে এই সূত্রটি বের করি। মূলত ২০০৯ সালের আবিষ্কার করা একটি সূত্রের পরিপূর্ণতার জন্য আমি অনেক দিন ধরে এই সূত্রটি বের করার চেষ্টা করছিলাম। অবশেষে ২০১৪ সালের শেষের দিকে এসে সেই চেষ্টা সফল হয়।

ছোটবেলা থেকেই অভাব অনটনের সংসারে বড় হন আমিনুর। দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে তার বাবা ছেড়ে চলে গেলে চরম অর্থনৈতিক দূর্দশার মধ্যে পতিত হয়ে দিশেহারা হয়ে যান। এরপর নিজের পড়াশোনার খরচ ও পরিবারের ব্যয় বহন করতে প্রতিদিন ৫/৬ টি টিউশনি করেন।

নিজের জীবন সংগ্রামের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১১ সালে একাদশ শ্রেণিতে পড়াকালীন সময় থেকে টিউশনি করে নিজের ও পরিবারের ব্যয়বহনের চেষ্টা করি। কিন্তু টিউশনি করে নিজে চলা ও পরিবারকে সাপোর্ট দেয়া যে কতটা কঠিন প্রতি পদে পদে সেটা বুঝেছি। ২০১৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে এই স্ট্রাগল আরো বাড়তে থাকে। ঢাকায় নিজের খরচ বাড়া, ফ্যামিলিকে সাপোর্ট দেয়া, পড়াশোনা ও অন্যান্য খরচ সবকিছু ম্যানেজ করতে ৬টা টিউশনিও করতে হয়েছে। এরমধ্যে প্রতিদিন ধানমন্ডি থেকে সদরঘাট যাতায়াত, একাডেমিক পড়া ও পরীক্ষার চাপে গবেষণা তো দূরে থাক সেমিস্টার ফাইনালের পড়াও ঠিকমতো পড়তে পারতাম না।

বর্তমানে তিনি তার নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম Our Math School G GRE Math পড়াচ্ছেন এবং বিদেশে PhD করতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভবিষ্যতে তার বিজ্ঞানের বড় বড় বিষয় নিয়ে গবেষণা করা, বড় প্রতিষ্ঠান তৈরি করা এবং দেশের শিক্ষার্থীদের বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।