বাসস
  ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২:০৪

উচ্চাভিলাষী জলবায়ু পদক্ষেপে বাংলাদেশ-ব্রাজিল ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে : পরিবেশ উপদেষ্টা

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ফাইল ছবি

ঢাকা, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আসন্ন জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কপ৩০) সফল করতে ব্রাজিলের নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। বাংলাদেশও উচ্চাভিলাষী, তবে অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু ফলাফলের লক্ষ্যে ব্রাজিলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। 

তিনি বলেন, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ কার্বন বাজার (আর্টিকেল ৬) ব্যবহারের বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। তবে কার্বন বাজার কোনোভাবেই জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতির বিকল্প হতে পারে না এবং পরিবেশগত সুরক্ষা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে অবশ্যই যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকতে হবে।

রিজওয়ানা হাসান আজ রাজধানীর একটি হোটেলে ব্রাজিলের ২০৩তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস। এতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, কূটনীতিক, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালে প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাণিজ্যিক লেনদেনের মাধ্যমে ব্রাজিল বর্তমানে লাতিন আমেরিকায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। তিনি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের জন্য ব্রাজিলীয় তুলায় অধিকতর বাজার সুবিধা, বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার, ওষুধ নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং যৌথ বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান। সম্প্রতি একটি বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানিকে ব্রাজিল কর্তৃক অনুমোদন প্রদানকে তিনি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে ব্রাজিলের সরকার ও জনগণকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ১৮২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ব্রাজিলের স্বাধীনতা অর্জন ছিল বিশ্ব ইতিহাসের এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। তিনি গণতন্ত্র, সাম্য, জলবায়ু উদ্যোগ ও বহুপাক্ষিকতায় ব্রাজিলের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। উপদেষ্টা স্মরণ করিয়ে দেন যে, ১৯৭২ সালের ১৫ মে ব্রাজিল ছিল দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম দেশগুলোর একটি যারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক- যেমন ২০২৪ সালের এপ্রিলে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌরো ভিয়েরার ঢাকা সফর, বাংলাদেশ কর্তৃক ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত জি-২০ নারী ক্ষমতায়ন সম্মেলনে অংশগ্রহণ এবং ব্রাজিলের প্রধান বিচারপতি আন্তোনিও হারমান বেঞ্জামিনের ঢাকা সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে।

তিনি জানান, কৃষি, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া খাতে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চূড়ান্ত হয়েছে এবং তথ্যপ্রযুক্তি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও বাণিজ্য সংলাপসহ ১১টি বিষয়ে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ ব্রাজিলের অভিজ্ঞতা থেকে জ্বালানি ও টেকসই কৃষি বিষয়ে শিখতে চায়, একইসঙ্গে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও সম্প্রদায় ভিত্তিক সহনশীলতায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে আগ্রহী।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা, আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা জোরদারে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষায় ব্রাজিলের সমর্থনের প্রশংসা করেন এবং ব্রাজিলকে ন্যায়বিচার ও সমতার অনুপ্রেরণাদায়ী অংশীদার হিসেবে অভিহিত করেন। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ব্রাজিলীয় ফুটবলের প্রতি গভীর অনুরাগ দুই দেশের জনগণের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বন্ধনের প্রতীক।

তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে বাণিজ্য, গণতন্ত্র, জলবায়ু উদ্যোগ ও সংস্কৃতিতে আরও এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ‘বাংলাদেশ-ব্রাজিল বন্ধুত্ব অটুট রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।