বাসস
  ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩০

সুনামগঞ্জে বালু লুট সিন্ডিকেট চক্রকে প্রশাসনের সতর্ক বার্তা

বালুমহালের জন্য বিখ্যাত সুনামগঞ্জ জেলার ধোওাজান নদী। ছবি: বাসস

মো. আমিনুল হক

সুনামগঞ্জ, ২৮ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): জেলার ধোওাজান নদী বালুমহালের জন্য বিখ্যাত। পাহাড়ি ঢলে আসা বালু এখানে আসে। প্রকৃতি নির্ভর এই বালুমহাল দখলের জন্য রাজনৈতিক মহলসহ সিন্ডিকেট চক্র তৎপর থাকে। মামু ভাগনে মিলেই এই মহাল দখল বেদখল হয়। আর এইসব সিন্ডিকেট চক্র তাদের নিজ স্বার্থে নদী পাড়ের মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে থাকে। 

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই ধোপাজান নদীসহ যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলনের মহোৎসব শুরু হয়েছিল। এক সপ্তাহেই নদীগুলোকে সাগরে পরিণত করে দিয়েছিল বালুখেকো সিন্ডিকেট চক্র। সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনসহ সুনামগঞ্জ জেলার সচেতন মহল এইসব বালুখেকোদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ করে আসছে।

সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি আবু নাছের এ বিষয়ে বলেন, আমরা পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আবেদন করেছিলাম, সাথে সাথে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ধোপাজানকে রক্ষার জন্য। 

সুনামগঞ্জ জেলার ইজারাবিহীন ধোপাজান বালুমহালে লুটপাট ঠেকাতে গত বছরের অক্টোবর মাসে সচেতন মহলসহ সকলের সহযোগিতা চেয়েছিলেন জেলা প্রশাসন। এবারও আবার জেলা প্রশাসকের ফেসবুক পেইজে বালু লুটের আশঙ্কা করছেন বলে জানিয়েছেন। বালু লুটের আশঙ্কা ব্যক্ত করে তিনি বলেছেন, ভুল তথ্য দিয়ে নৌ মন্ত্রণালয় থেকে ধোপাজান চলতি নদীতে ভিট বালু উত্তোলনের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বালু মহাল রক্ষায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয়ের অভাব আছে। 

গত বছরের পাঁচ আগস্টের পর প্রতিদিন হাজারো ছোট বড় নৌকা ধোপাজান চলতি নদীতে প্রবেশ করে কোটি কোটি টাকার বালু লুট করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্নভাবে বালু লুট প্রতিরোধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু, পুলিশের নিস্ক্রিয়তায় বালু লুটেরা চক্র তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। 

প্রশাসনকে তোয়াক্কা করে পাঁচ থেকে ছয়শ বারকী নৌকা বাল্কহেড বালু, পাথর উত্তোলন করেছিল । শত শত বোমা মেশিনও ওই সময় দিনে রাতে চালু ছিল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে চাঁদাবাজিও হয়েছে। 

সুনামগঞ্জের বড় পাথর মিশ্রিত বালুমহাল ধোপাজান। প্রায় সাত বছর ধরে এ মহালটি ইজারাবিহীন। 

গত বছর তিনদিন ধরে প্রচার হয়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজে রাস্তা ভরাট ও উঁচু করার জন্য ভুল তথ্য দিয়ে নৌ মন্ত্রণালয় থেকে ধোপাজান চলতি নদীতে ভিট বালু উত্তোলনের অনুমতি নিয়েছে ঢাকার লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আগামী এক বছরে তিন লাখ ঘনমিটার বা প্রায় এক কোটি ২১ লাখ ২০ হাজর ফুট বালু তারা উত্তোলন করবে। এমন খবর জানাজানি হলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলে সচেতন মহলে। 

গত মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের ফেসবুক পেজ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নদনদী ও মহালগুলোতে বালু লুটের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বালু লুট প্রতিরোধে সবাইকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান, জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। জেলা প্রশাসক বলেন, ধোপাজান নদী খননের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের মতামত কিংবা অবগত করা হয়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বলেন, ভিট বালু তুলতে এ জেলায় কুশিয়ারা ও সুরমা নদীতে অনুমতি দেওয়া হয়। 

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম ছদরুল বলেন, এভাবে সাদাপাথর লুট হয়েছিল। একইভাবে নানা ফন্দিফিকির করে ধোপাজান চলতি নদী লুটতে চায় সিন্ডিকেট চক্র।

পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার করা মামলায় ২০১৮ সাল থেকে সুনামগঞ্জের চলতি নদীর ধোপাজান বালু মহাল ইজারা হয়নি বলে ফেসবুক পেজে জানান, জেলা প্রশাসক।