শিরোনাম
রোস্তম আলী মণ্ডল
দিনাজপুর, ২৬ আগস্ট ২০২৫ (বাসস): দিনাজপুর হাকিমপুরের বোয়ালদাড় ইউনিয়নের বিশাপাড়া গ্রাম। এই গ্রামে গড়ে উঠেছে দেশি-বিদেশি প্রজাতির গাভি নিয়ে ছোট বড় ৬৫টি খামার। খামারগুলোতে রয়েছে ২৫ থেকে ৩৫টি দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভি। প্রতিটি গাভির বাজার মূল্য ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। খামারের মালিকরা নিয়মিত দুধ বিক্রি করে প্রত্যেককে হয়েছেন স্বাবলম্বী। তাই গ্রামটি এখন ‘দুগ্ধ ভিলেজ’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে বিশাপাড়া বা দুগ্ধ ভিলেজ অবস্থিত।
হাকিমপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সঙ্গে সংযুক্ত বেসরকারি সাহায্য সংস্থা এমবি এসকে'র গাভি পালন ও দুগ্ধ খামার নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান জানান, বিশাপাড়া গ্রামে ছোট-বড় ৬৮টি খামার রয়েছে। এগুলোতে মোট গাভির সংখ্যা ২৬৫টি। এদের মধ্যে ৮৫টি বকনা, শংকর জাতের ৬৫টি ও দেশি ১১৫টি গাভি রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৮৫টি গাভি থেকে অন্তত ৫৭০ কেজি দুধ উৎপাদন হয়।
তিনি আরও জানান, বেসরকারি সাহায্য সংস্থার সহযোগিতায় গ্রামটির দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষদের স্বাবলম্বী করতে ব্যাপকভাবে কাজ করা হচ্ছে। ফলে গ্রামের পরিবারগুলো গাভি পালন ও দুধ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি বিশাপাড়া গ্রামটিকে ‘দুগ্ধ ভিলেজ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার সরেজমিনে বিশাপাড়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় খামারি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য মো. মাসুদুর রহমানের (৫০) সঙ্গে। তিনি জানান, ৬ বছর আগে ফ্রিজিয়ান জাতের একটি গাভি ক্রয় করেন তিনি। এখন তার বসত বাড়িতে গড়ে তোলা খামারে ৮টি গাভি রয়েছে। এরমধ্যে ৪টি গাভি দুধ দেয়। আর ৪টির গাব আছে। ইতোমধ্যে তিনি থামার থেকে ৩টি গাভি এবং ৭টি আড়িয়া গরু ২৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। এখন ৪টি বাছুরও রয়েছে। বর্তমানে তার খামারে থাকা ৮টি গাভির আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, আগে সময়ে দুধ বিক্রি করতে সমস্যা হতো। এখন প্রতিদিন বগুড়া থেকে পাইকারেরা বাড়ি থেকে দুধ কিনে নিয়ে যায়। প্রতি লিটার দুধ ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারছি। এনজিও কর্মকর্তা ন্যায্য মূল্যে দুধ বিক্রির জন্য বগুড়া শহরের দই তৈরি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দিয়েছে। ফলে এখন আমরা সঠিক মূল্যে দুধ বিক্রি করে উপকৃত হয়েছি। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ কেজি দুধ বিক্রি করি।
অবসরপ্রাপ্ত এ সেনাসদস্য বলেন, এই গ্রামের সব বাড়িতে গাভি পালনে দুধ উৎপাদন হয়। গ্রাম থেকে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ লিটার দুধ বগুড়া শহরের উজ্জ্বল ঘোষ ও ফটিক চন্দ্র নিয়ে যান।
বিশাপাড়া গ্রামের অপর খামারি সাহেব আলীর স্ত্রী আমেনা বেগম (৪৩) বলেন, ৭ বছর আগে এনজিও থেকে এক লাখ টাকা স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে এবং ৬ টি গাছ বিক্রি করে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায় আমরা স্বামী-স্ত্রী দুটি বিদেশি বকনা গরু কিনেছিলাম। ওই গরু পালন করে এখন আমাদের খামারে ৭টি গাভি। এর মধ্যে ৪টি গাভি প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ কেজি দুধ দেয়। অপর ৩ টি গাভি গাব হয়েছে, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই বাছুর দেবে।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে ৯টি গরু ২৩ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। ওই টাকায় তার দুই মেয়ের বিয়ে দেওয়াসহ এক বিঘা জমি কিনে তাতে ঘাস চাষ করেছি। এই ঘাসই গাভিদের খাওয়ানো হচ্ছে। এভাবে খামার এগিয়ে নিচ্ছি।
হাকিমপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সামাদ জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে গাভি পালন ও পরিচর্যার লক্ষ্যে ওই গ্রামের খামারিদের নিয়ে নিয়মিত উঠান বৈঠক করা হয়। এছাড়া কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে মেডিক্যাল টিম গঠন করে চিকিৎসা ও সেবা দেওয়া হচ্ছে। ফলে দুগ্ধ ভিলেজ নামে পরিচিত বিশাপাড়া গ্রাম এখন দুগ্ধ উৎপাদনের মডেল গ্রাম হিসেবে সুখ্যাতি পেয়েছে।