বাসস
  ০২ আগস্ট ২০২৫, ২০:০৮

ভোলায় স্পিডবোটে বাড়তি ভাড়া আদায়, বিআইডব্লিউটিএর অভিযান

ছবি: সংগৃহীত

।। আল-আমিন শাহরিয়ার ।।

ভোলা, ২ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : বরিশাল থেকে লঞ্চে করে ভোলায় নিয়মিত যাওয়া আসা করেন মো. তাওহীদ ও সুলতান আহম্মেদ। তাদের অভিযোগ, নৌপথে অসাধু স্পিডবোট মালিকরা যাত্রীদের জিম্মি করে দীর্ঘবছর ধরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন। একই অভিযোগ যাত্রী আবুল কালাম ও ডা.মাহবুব আলমের।

তারা বলেন, অসাধু স্পিডবোট মালিকচক্র ও ইজারাদাররা সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে ভোলা-বরিশাল ও ভোলা-লাহার হাট নৌরুটে অস্বাভাবিক ভাড়া আদায় করছে।

যাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভোলায় এসব স্পিডবোট মালিক ও লঞ্চঘাটে ইজারাদারের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। 

জানা গেছে, ভোলা-বরিশাল ও ভোলা-লাহার হাট নৌপথে অসাধু স্পিডবোট মালিকরা যাত্রীদের জিম্মি করে দীর্ঘবছর ধরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতো। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতাকালে মনগড়া এসব ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারতেন না। এমনকি সরকারিভাবেও প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিন্তু এসব চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে এবার মাঠে নেমেছে সরকারি সংস্থাটি। 

সরেজমিনে কথা হয় ভোলার ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে। তারা জানান, বিগত আওয়ামী স্বৈরশাসনামলে ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জহুরুল ইসলাম নকীবের কব্জায় ছিল সেখানকার লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটগুলো। 

নকীবের একক আধিপত্য আর নির্দেশনায় ভোলা-বরিশাল, ভোলা-লাহারহাট নৌরুটে স্পিডবোটগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতো। তখন জোড়ের মুল্লুকে প্রতিবাদের কেউ ছিল না। কিন্তু পুরোনো সেই নৈরাজ্য আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এখন নতুন মোড়কে শুরু করেছে দুর্বৃত্তচক্র। 

এমন পরিস্থিতিতে যাত্রী হয়রানি, অধিক ভাড়া আদায় এবং চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করায় ভেদুরিয়া ঘাটের দুর্বৃত্তরা নড়েচড়ে বসেছে। 

সম্প্রতি ভেদুরিয়া লঞ্চঘাটে অভিযান চালিয়ে নৌবাহিনী ইজারাদারের নিয়োজিত দুই চাঁদাবাজকে আটক করেছে বলেও জানান তারা। বিআইডব্লিউটিএর এমন উদ্যোগে তারা সন্তষ্টি প্রকাশ করেছেন। 

ভোলার বিআইডব্লিউটিএ'র বন্দর কর্মকর্তা রিয়াদ হোসেন বাসসকে জানান, গত ২৮ এপ্রিল থেকে ভেদুরিয়া-বরিশাল নৌপথে সরকার নির্ধারিত স্পিডবোট ভাড়া জনপ্রতি ৩শ' টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভেদুরিয়া-লাহারহাট নৌপথে একই গেজেট মূল্যে ১৫০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।  

আগে ইজারাদাররা (ভেদুরিয়া ঘাট) বার্নিং চার্জ সরকারি ৭৫ টাকার স্থলে ১৩ শ টাকা গ্রহণ করতো। কিন্তু সরকারের নির্ধারিত ভাড়া ঢালু হওয়ায় ৬শ টাকা গ্রহণ করছে তারা। এ পরিস্থিতিতে তারা তাদের ঘনিষ্ঠ স্পিডবোট মালিকদের ১/২ জন অতিরিক্ত যাত্রী বহনে উৎসাহিত করে। ফলে ৩ থেকে ৬ শ টাকা অতিরিক্ত অর্জিত হয়। 

কিন্তু সার্ভে সনদে ৪০ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিনের বোটে ৮ জন যাত্রী এবং ৫৫ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিনের বোটে ১০ জন যাত্রী ধারণ ক্ষমতা থাকে। ইজারাদাররা ৪০ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিনের বোটে ৯/১০জন যাত্রী নিয়ে যাতায়াত চালু করেন। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বাধা দিলে তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার শুরু করে। 

বন্দর কর্মকর্তা তাদের রুট পারমিটে কোনো ধরনের খরচা নেই মর্মে বার বার বিয়ষটি নিশ্চিত করলেও তারা তাদের অপকর্ম থেকে বিরত থাকছে না। ফলে বিআইডব্লিউটিএ এসব অন্যায় তৎপরতার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে জানান ভোলা নৌ-বন্দরের এ কর্মকর্তা।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভেদুরিয়া ঘাট ইজারাদার আব্দুর রহমান গংরা বার্নিং চার্জ ৭৫ টাকার স্থলে ৬শ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা গ্রহণ করে থাকে। বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড ও নৌ-বাহিনী এ বিষয়ে সোচ্চার হলে তারা ধর্মঘটের ডাক দিয়ে বিষয়টি পুনরায় বন্দর কর্মকর্তার ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে।

এছাড়া ইজারাদার ঘাটে প্রবেশে সরকারি মূল্য ৫ টাকার স্থলে ১০ টাকা গ্রহণসহ হাতে বহনযোগ্য মালামাল থেকে যাত্রীপ্রতি ৫শ' টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জোড়পূর্বক আদায় করে থাকেন। 

সূত্র মতে, এই ইজারাদারের কাছ থেকে গত ২৭ জুলাই সরকার নির্ধারিত গাড়ী পার্কিং ইয়ার্ড ও অতিরিক্ত চার্জ গ্রহণ করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। 

বর্তমানে ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট ঘাটে ইজারাদার ও স্পিডবোট মালিকপক্ষ তাদের দাবি দাওয়া আদায়ে ভোলা-বরিশাল নৌরুটে গত ৪/৫ দিন ধরে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রেখেছে। 

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ঘাট ইজারাদার আব্দুর রহমান ও সংশ্লিষ্ট স্পিডবোট মালিকরা জানিয়েছে, আমাদের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা ও অবান্তর।