শিরোনাম
ঢাকা, ২৬ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশে সুশাসন নিশ্চিত করা বছরের পর বছর ধরে কঠিন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ নিশ্চিত করতে প্রতিপক্ষ শক্তির প্রয়োজন।
আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের নতুন গ্রন্থ ‘অর্থনীতি, শাসন ও ক্ষমতা: জাপিত জীবনের আলেখ্য’ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্যে প্রদানকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি এম হুমায়ুন কবির, লেখক ও বিশ্লেষক অলতাফ পারভেজ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, অধ্যাপক আবু আহমেদ, গবেষক খন্দকার সাখাওয়াত আলী, ভূঁইয়া আসাদুজ্জামান এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবদুল মজিদ বক্তব্য রাখেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সুশাসন অনেক কঠিন। প্রধানমন্ত্রী, সংসদ সদস্য তাদের ক্ষমতার ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ নেই। এখানে সংস্কার না হলে যত সংস্কারই করা হোক, কোনো লাভ হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কার দরকার।’
সরকারের অংশ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো একটি দেশ শাসন করা কঠিন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হচ্ছে না। তবুও আমরা কিছু পদচিহ্ন রেখে যেতে চাই, যাতে পরবর্তী সরকার তা অনুসরণ করতে পারে।’
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনার চেষ্টা করছে, কিন্তু এই স্বল্প সময়ে বড় কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়।
ব্যাংকিং খাত প্রসঙ্গে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা তহবিলের প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থ লুট করে বিদেশে চলে গেছেন। যদি কোনো ব্যাংকে ২০ হাজার কোটি টাকা আউটস্টান্ডিং থাকে, তার মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকাই লুটপাট হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল করতে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের মতো অর্থের প্রয়োজন হবে। যদিও আইএমএফ প্রাথমিকভাবে এই চাহিদা ১৮ বিলিয়ন ডলারের হিসাব দিয়েছিল।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা সহজ নয়, ভবিষ্যতের জন্যও এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।’
এ সময় তিনি কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘বাংলাদেশে এটি এখনো ৭.৫ শতাংশ, যেখানে নরওয়ে ও সুইডেনে এই হার অনেক বেশি।’
এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে এর বিরোধিতা করে আসছেন, কিন্তু আমাদের প্রস্তুত হওয়া দরকার।’
বইয়ের লেখক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘অর্থনীতি, শাসন এবং ক্ষমতা এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় না ঘটলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।’
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, রাজনীতিবিদ এবং সংশ্লিষ্টরা যদি বছরের পর বছর ধরে সৃষ্ট বৈষম্য দূর করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ না নেন, তাহলে দেশ আরও বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতির অভাবে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে গেছে।
এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে, সেটাই দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’