বাসস
  ২৬ জুলাই ২০২৫, ১৭:৪৯

জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবারের মধ্যে সম্মাননা ও অনুদানের চেক হস্তান্তর

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের 'জুলাই পুনর্জাগরণ' অনুষ্ঠানমালা ২০২৫ এর অংশ হিসেবে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে জুলাই শহীদ পরিবারকে সম্মাননা ও অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হয়। ছবি: পিআইডি

ঢাকা, ২৬ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বিভিন্ন কোম্পানির পক্ষ থেকে আজ জুলাই শহীদ ১৬টি পরিবার ও একজন আহতের মধ্যে সম্মাননা স্মারক ও মোট ১৭ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়েছে।

জুলাই বিপ্লবের শহীদদের আত্মত্যাগের স্মরণে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের 'জুলাই পুনর্জাগরণ' অনুষ্ঠানমালা ২০২৫ এর অংশ হিসেবে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে জুলাই শহীদ পরিবারকে সম্মাননা ও অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হয়।

রাজধানীর কাওরান বাজারে পেট্রোবাংলা ভবনের ড. হাবিবুর রহমান অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং এর আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত জুলাই যোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন পেট্রোবাংলার ইমাম ক্বারী মাওলানা মো. আব্দুল হাই। এরপর জুলাই আন্দোলনের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচকরা বক্তব্য প্রদান করেন।

আহত জুলাই যোদ্ধা হোসাইন আহমেদ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করায় এবং তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ি পুলিশ থানার সামনের ঘটনার বর্ণনা করে বলেন, ‘পুলিশ আমার হাতে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে, যার ফলে আমার হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর মৃত ভেবে আমাকে গাড়িতে তোলা হয়।’ তারপর তার ভাইরা তাকে উদ্ধার করে কীভাবে হাসপাতালে ভর্তি করে তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন।

নিহত ফাইয়াজের বাবা আলহাজ শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমার ছেলের বিদেশে চলে যাওয়ার কথা ছিল। তার সরকারি চাকরি করার কথা ছিল না। তারপরও সে আন্দোলনে গিয়েছিল বৈষম্য, দুর্নীতি, অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। ১৮ জুলাই ধানমন্ডি ২৭ নাম্বারের কাছে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়।’ তিনি বলেন,‘পিতার কাছে সন্তানের লাশ সব থেকে ভারী। এমন অনুষ্ঠানে আসলে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ আরো বেড়ে যায়, তারপরও সন্তানের জন্য সম্মান পাচ্ছি এটা ভেবে সম্মানিত বোধ করি।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জুলাই বিপ্লবের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাদের আত্মত্যাগকে জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে এখনো ভালো মানুষ আছে, বাংলাদেশ যে এখনো নষ্ট হয়ে যায়নি, বিশ্বের দরবারে নিজেদের অবস্থানের জন্য বাংলাদেশের মানুষের যে একটা স্পৃহা আছে, দেশের প্রতি যে ভালোবাসা আছে, তার প্রমাণ এই জুলাই বিপ্লব। এটি একটি মাইলফলক। মাইলস্টোন কলেজের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত সবার কথা স্মরণ করে তিনি বিশেষ করে শিক্ষিকাদের আত্মত্যাগকে একটি বিরল ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, এটা দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, সমাজের প্রতি যে ভালোবাসা তার বহিঃপ্রকাশ। এসব ঘটনা আমাদের অনুপ্রাণিত করে।

আরিফ নামের একজন জুলাই যোদ্ধার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘সে তার মাকে চিঠি লিখে আন্দোলনে যায়, সে না ফিরলেও তার দেশ ফিরবে। এ থেকে বোঝা যায় জুলাই বিপ্লব সরাসরি দেশ প্রেমের সঙ্গে জড়িত। দুর্নীতি ও জুলাই আন্দোলন দু’টি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ব্যাপার।’

সচিব বলেন, ‘এসব ঘটনা থেকে বোঝা যায় দেশে ভালো মানুষের সংখ্যা বেশি। গুটিকয়েক খারাপ মানুষের জন্য দেশকে নষ্ট হতে দিতে পারি না। আমাদের দায়িত্ব হল তাদেরকে চিহ্নিত করা, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাতে তারা আর দেশের ক্ষতি করতে না পারে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. আমিন উল আহসান, চেয়ারম্যান (সচিব), বিপিসি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকের নিজ-নিজ কাজ আছে, দায়িত্ব আছে, আমরা যদি নিজ-নিজ কাজ সঠিকভাবে করি, সঠিক দায়িত্ব পালন করি তবে মানুষের অধিকার ক্ষুন্ন হয় না, বৈষম্য তৈরি হয় না। সরকারি কর্মচারী হিসেবে আমাদেরকে মনে রাখতে হবে একদিন আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে, প্রধান বিচারপতি হলেও পার পাওয়া যাবে না।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি মো. রেজানুর রহমান, চেয়ারম্যান, পেট্রোবাংলা, সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং অনুষ্ঠানে আগত শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে দেশ গঠনে কাজ করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে মাওলানা গাজী সানাউল্লাহ জুলাই আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী সব শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া মাহফিল ও মোনাজাত পরিচালনা করেন।