শিরোনাম
\ আব্বাছ হোসেন \
লক্ষ্মীপুর, ২১ জুলাই ২০২৫(বাসস) : আষাঢ়ের শেষে টানা বৃষ্টিতে জেলার বিস্তীর্ণ ফসলসহ সবজি ক্ষেত ভেসে গেছে। এতে জেলার সবজি ক্ষেতে পানি জমে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে আমনের বীজতলারও। ফলে কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এ অবস্থায় বৃষ্টির পানি না সরলে এবং নতুন করে সবজি চাষ সম্ভব না হলে বাজারে সবজির দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সাধারণ ক্রেতারা।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, সবজি ও মৎস্য খাতের প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান কৃষি কর্মকর্তা।
সরেজমিনে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার সুতারগোপ্টা,ভবানীগঞ্জ,পিয়ারপুর,মিয়ার বেড়ির কয়েক শত একর সবজির ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। আর কৃষকরা বাধ্য হয়ে বৃষ্টির পানি সেচে ফেলার চেষ্টা করছেন। এসব এলাকা সবজি উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। জমির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জুড়েই এখানে সবজি চাষ হয়। বর্তমানে মাঠের পর মাঠ জুড়ে চাষ করা হয়েছে শসা, পটল, বরবটি, পুঁইশাক, ঢেঁড়স, বেগুন, আগাম বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন ধরনের বর্ষাকালীন সবজি।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কৃষকরা আগাম সবজি বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু আষাঢ় শেষের টানা বৃষ্টিতে সেই স্বপ্নে ধস নেমেছে। পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে মাঠের পর মাঠ সবজির ক্ষেত। এবার লক্ষ্মীপুরে সবজির চাষ হয়েছে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বৃষ্টিতে বেশিরভাগ সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। পাশাপাশি ১১০০ হেক্টর আমনের বীজতলার মধ্যে ৫০০ হেক্টর বীজ তলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রায় ৫০০ পুকুর ও ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সব মিলিয়ে কৃষি ও মৎস্য খাতে প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
কৃষকরা বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে লাভের আশায় নানা ধরনের সবজি চাষ করেছি। কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে শসা, পটল, বরবটি, পুঁইশাক, ঢেঁড়স, বেগুন, আগাম বাঁধাকপি সব নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েদিনের মধ্যে বাজারে এসব সবজি বিক্রি করা কথা। এখনও পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে বেশিরভাগ সবজির ক্ষেত। সব শেষ হয়ে গেছে। কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সরকার যদি প্রণোদনার ব্যবস্থা করে,তাহলে হয়ত ঘুরে দাঁড়াতো পারবো। প্রণোদনা না পেলে না খেয়ে থাকতে হবে।
মৎস্য চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ৫০০’র বেশি পুকুর ও ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে যায়। এতে করে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত বছরের বন্যার ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এবার টানা বৃষ্টিতে পুকুরের সব মাছ ভেসে গেছে। অনেকে ধারদেনা করে মাছ চাষ করেছেন। কীভাবে মানুষের ধারদেনা শোধ করবেন তাই নিয়ে চিন্তায় আছেন।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমাম হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে সবজি ও আমনের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তালিকার পর তাদের পুনর্বাসন ও প্রণোদনা দেয়া হবে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, এবারের টানা বৃষ্টিতে ৫শ পুকুর বা ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।