শিরোনাম
দিনাজপুর, ১৫ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : দিনাজপুর শহরের বালুয়াডাঙ্গা অন্ধ হাফেজ মোড়ের বাসিন্দা ইমরান খান (৩৫) শখের বশে কোয়েল পাখির খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। নিজ বাড়িতে কোয়েল পাখির খামার গড়ে তুলে স্বয়ংসম্পূর্ণ উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সোমবার দিনাজপুর শহরে বালুয়া ডাঙ্গা মহল্লায় উদ্যোক্তা ইমরান খানের কোয়েল পাখির খামারে সরেজমিন গিয়ে তার সফলতার চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
ইমরান খান বলেন, ‘৭ বছর আগে শখের বশে ছেলে-মেয়েকে ১০টি কোয়েল পাখি কিনে দিয়েছিলাম। তখনই এই খাতের সম্ভাবনা চোখে পড়ে। আস্তে আস্তে খামার গড়ে তুলেছি। এখন প্রতি চার দিন পরপর আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার বাচ্চা হ্যাচারিতে ফুটিয়ে বিক্রি করছি। প্রতিদিন শহরে বাহাদুর বাজারের ব্যবসায়ীরা খামার থেকে ৮ শত থেকে ১ হাজার ডিম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি মাসে খামার থেকে আয় হচ্ছে লক্ষাধিক টাকা।’
তিনি জানান, ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীর সহযোগিতায় তিনশ’ কোয়েল পাখি নিয়ে খামার শুরু করেন। ধীরে ধীরে খামারের পরিসর বেড়ে যায়। কোয়েলের ডিম ও খাদ্যের হিসাব করে দেখা যায়, খরচের চেয়ে লাভ প্রায় দ্বিগুণ। প্রতিটি কোয়েল পাখি ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ডিম দেওয়া শুরু করে। একটানা ১৮ মাস ডিম দেয়। এরপর পাখিগুলো হোটেলে বিক্রি হয় তিনশ’ টাকা কেজি দরে। প্রতিটি পাখি দিনে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম খাবার খায়। একটি ডিম পাড়া কোয়েল পাখি বিক্রি হয় ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়।
ইমরান খান বলেন, খামার চালাতে গিয়ে একসময় ডিম ফুটানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তিনি। শুরু করেন বাচ্চা ফুটানোর হ্যাচারি। এখন প্রতি ৪ দিন পরপর হ্যাচারি থেকে ২ হাজার ৫ শ’ থেকে ৩ হাজার কোয়েলের বাচ্চা উৎপাদন ও বিক্রি করছেন ।
দিনাজপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাটসহ আশেপাশের জেলা গুলো থেকে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা ইমরানের খামার থেকে এক-দুই দিনের বাচ্চা কিনে গিয়ে খামার গড়ে তুলেছেন।
প্রতিদিন তার খামার থেকে এক হাজার থেকে দেড় হাজার ডিম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি ডিম বিক্রি হয় ৩ টাকা দরে। একদিনের বাচ্চা বিক্রি হয় ৭ থেকে ৮ টাকায়।
ইমরান বলেন, ‘খামারে দু’জন কর্মী নিয়মিত কাজ করছেন। তাদের প্রত্যেককে মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন দিয়ে যাচ্ছি।’
কর্মচারী মোকারক হোসেন বলেন, ‘আমি ছাড়াও আরও একজন এখানে কাজ করছে। ডিম উঠানো, খাবার দেওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সব কিছুই আমরা দু’জন করি। আগে খামার ছোট ছিল, এখন হ্যাচারি হয়েছে। আমাদের জন্য ভালো একটা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
দিনাজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আশিকা আকবর তৃষা বলেন, ‘কোয়েল পাখির খামার গড়ে তুলে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। কোয়েলের ডিম আকারে ছোট হলেও পুষ্টিগুণে মুরগি বা হাঁসের ডিমের সমতুল্য। কোয়েল পাখির মাংস নিরাপদ খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। খামারি ইমরান নিজ উদ্যোগে একটি সফল খামার গড়ে তুলেছেন। তার খামারে শুধু নিজের নয়, অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে নিয়মিত তার খামার পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছি।’