বাসস
  ১৩ জুলাই ২০২৫, ১৩:৪৯

শেরপুরে জনপ্রিয় হচ্ছে কলাচাষ

অল্প পুঁজি ও কম পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়ায় শেরপুরে কলা হয়ে উঠেছে এক সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল। ছবি : বাসস

শেরপুর, ১৩ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় শেরপুরে জনপ্রিয় হচ্ছে কলাচাষ। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া কলাচাষে উপযোগী, তাই যুক্ত হচ্ছেন নতুন চাষিরাও।

চলতি বছর শেরপুরে ৬৬০ হেক্টর জমিতে কলাচাষের লক্ষ্য নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। তবে ইতোমধ্যেই তা ছাড়িয়ে ৯৪৩ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া শেরপুরের কলার গুণগত মান ভাল এবং সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্তত ২০টি জেলায় বিক্রির জন্য যাচ্ছে এই জেলার কলা। তাই বর্তমানে অল্প পুঁজি ও কম পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়ায় শেরপুরে কলা হয়ে উঠেছে এক সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, সদরের চরশেরপুর ইউনিয়নের যোগনীবাগ গ্রাম। চলতি বছর এই গ্রামের প্রায় ৫শ' কৃষক বিভিন্ন জাতের কলা চাষ করেছেন। বিঘা প্রতি খরচ হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। যেখান থেকে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার কলা বিক্রি করছেন কৃষক। সব খরচ বাদে বিঘা প্রতি লাভ হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।

কলাচাষি ও বিক্রেতারা জানান, শেরপুরের কলার স্বাদ ও গুনগতমান ভালো হওয়ায় চাহিদা বেশি। তাই শেরপুরের শ্রীবরদি উপজেলার চৌকিদার বাড়ি মোড়ের কলার হাট থেকে দৈনিক বিপুল পরিমাণ কলা বিক্রি হয়। 

জানা যায়, এই হাটে প্রতিদিন গড়ে অর্ধকোটি (৫০ লাখ) টাকার কলা অন্তত ২০টি জেলায় সরবরাহ হয়। যা এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।

শ্রীবরদির সদর ইউনিয়নের কলাচাষি মুনসর আলী (৫০) বলেন, এই উপজেলায় লাভবান হওয়ায় একজনের কলার চাষ দেখে অন্যজন শুরু করেছে। তিনি আরো জানান, এবার আমি ১২শ কলার গাছ রোপন করেছি। যেখান থেকে অন্তত ৬ লাখ টাকার মতো কলা বিক্রি করা যাবে। অন্যান্য ফসল থেকে কলা চাষে বেশি সাফল্য আসছে তাই কৃষক কলাচাষের প্রতি আগ্রহ বাড়াচ্ছে।

একই ইউনিয়নের কৃষক আব্বাস মিয়া (৪৫) জানান, অন্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে খরচ কম। জমি তৈরির পর প্রথম দফায় চারা রোপণ করলেই কয়েক মাসের মধ্যে ফলন আসে। এরপর নিয়মিত পরিচর্যা করলে একই জমিতে একাধিকবার ফলন পাওয়া যায়। এ কারণেই ধান কিংবা অন্য শস্য বাদ দিয়ে সীমান্তের অনেক কৃষক এখন কলা চাষে মনোযোগ দিচ্ছেন।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, শ্রীবরদীর পাশাপাশি সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকাতেও কলা চাষ হচ্ছে। একবার কলার চারা রোপণে ২৪ মাসে তিনবার ফলন পাওয়া যায়। অল্প শ্রম ও পুঁজিতে ভালো লাভ হওয়ায় অন্য ফসলের তুলনায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কলা চাষের পরিধি। ভবিষ্যতে এ চাষ আরও বিস্তৃত হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, এক বিঘা জমিতে কলা চাষে প্রায় ১ লাখ টাকার মতো গড়ে লাভ হয়। তাই দিন দিন কলা চাষে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ থেকেও উচ্চফলনশীল জাত এবং আধুনিক কলাচাষে দেয়া হচ্ছে সব ধরনের সহায়তা।