বাসস
  ০২ জুলাই ২০২৫, ১৬:৫৩

কুমিল্লায় জমি নিয়ে বিরোধে প্রবাসীর স্ত্রী খুন ; চারজন গ্রেফতার

কুমিল্লা, ২ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় পারিবারিক জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে প্রবাসীর স্ত্রীকে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে খুন করে মরদেহ ফেলে রাখা হয় সেফটিক ট্যাংকে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা সবাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। 

বুধবার  দুপুরে বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আজিজুল হক বাসস’কে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, রাজাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণগ্রামের সৌদি প্রবাসী শামসুল হক আলমের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম (৪৫) কে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। তার সাথে প্রতিবেশি ও আত্মীয়দের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির পাশের একটি জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জেরে তারই নিকট আত্মীয়া ও স্বামীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৫০) পরিকল্পনায় তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে।

প্রথমে নুরজাহান স্থানীয় যুবক আনোয়ার হোসেনের (৩০) সঙ্গে দুই লাখ টাকার চুক্তিতে হত্যাকাণ্ডের সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তীতে এই পরিকল্পনায় যুক্ত হয় আরো দুই যুবক-রুবেল আহমেদ মিন্টু (৩১) ও মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন জিল্লু (২৭)।

গত ২৭ জুন সকালে ফেরদৌসী বেগমকে একটি নির্জন বাগানে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহ একটি বস্তায় ভরে ফেলে দেওয়া হয় বাড়ির অদূরে একটি সেফটিক ট্যাংকে।

নিখোঁজের পরপরই পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় সাধারন ডায়েরি (জিডি) করা হয়। টানা কয়েকদিন খোঁজাখুঁজির পর মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় ২শ’ গজ দূরে ট্যাংকের ভেতরে বস্তাবন্দি অবস্থায় একটি মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

ঘটনার পর নিহতের ছেলে ইকরামুল হাসান বুড়িচং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার ভিত্তিতে পুলিশ প্রথমে প্রধান অভিযুক্ত নুরজাহান বেগমকে আটক করে। তার দেয়া জবানবন্দিতে উঠে আসে আনোয়ার, রুবেল ও জিল্লুর নাম। এরপর পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে তাদেরও আটক করা হয়।

তদন্ত চলাকালে আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে, ঘটনাস্থল থেকে একটি মোবাইল ফোন, নিহতের কানের দুল ও গলার স্বর্ণের চেইন উদ্ধার করা হয়। বুধবার চার আসামিকেই আদালতে হাজির করা হলে তারা সবাই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে তাদের কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিনের পারিবারিক জমি নিয়ে এই পরিবারে বিরোধ চলছিল। এমন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডে পুরো এলাকায় চরম উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় আরো কেউ জড়িত আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।