বাসস
  ০১ জুলাই ২০২৫, ২০:২৫

নথি জালিয়াতির মামলায় কক্সবাজারের সাবেক ডিসি ও জেলা জজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন

ছবি : বাসস

চট্টগ্রাম, ১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : কক্সবাজারের মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত একটি মামলার নথি জালিয়াতির অভিযোগে করা দুদকের মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) রুহুল আমিন, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। 

আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

এ মামলার বাকি তিন আসামি হলেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদ, আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌঁসুলি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, আদালত শুনানি শেষে এ মামলার পাঁচ আসামির প্রত্যেকের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ দিয়েছেন। এ সময় পাঁচ আসামির সবাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আগামী ধার্য তারিখ ৩ আগস্ট পর্যন্ত তাদের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেছেন। আগামী ধার্য তারিখে এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ হবে। প্রথম দিন বাদী সাক্ষ্য দেবেন।

মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় জানা গেছে, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য এক হাজার ৪১৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এতে চিংড়ি ঘের, ঘরবাড়িসহ অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। চিংড়ি ঘেরের ক্ষতিপূরণের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেনামে ২৫টি চিংড়ি ঘের দেখিয়ে ক্ষতিপূরণের ৪৬ কোটি টাকা থেকে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। এ অভিযোগে স্থানীয় বাসিন্দা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর আদালতে একটি মামলা করেন।

এতে কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশ দেন।

কিন্তু তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার মামলার এক নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে নথিপত্র পাঠান দুদকের প্রধান কার্যালয়ে।

জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনের নাম বাদ দেওয়ার ঘটনা জানতে পেরে একই আদালতে বাদী কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, জেলা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ সাত জনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করেন।

পরে মামলাটির তদন্ত করে দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তদন্তে সাবেক ডিসি ও জেলা জজের পাশাপাশি বাদীপক্ষের আইনজীবী, নাজির এবং স্টেনোগ্রাফারের জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই আদালতে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ না মেলায় দুদকের কক্সবাজার আদালতের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রহিম ও কক্সবাজারের সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম শাহ হাবিবুর রহমানকে অব্যাহতি দেয়। 

চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি কক্সবাজারের বিশেষ জজ আদালতে জালিয়াতির বিষয়ে দুদকের দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হয়। ২৩ জানুয়ারি আদালত ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অভিযুক্ত পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে তারা আদালতে হাজির হয়ে অন্তর্বর্তী জামিন পান। সম্প্রতি মামলাটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারের জন্য স্থানান্তর করা হয়। গত ১৭ জুন শুনানি শেষে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আজ ১ জুলাই দিন ধার্য ছিল। মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।