বাসস
  ১১ জুন ২০২৫, ১৬:০৫
আপডেট : ১১ জুন ২০২৫, ১৬:৩৮

গ্রেটা থুনবার্গকে বহিষ্কার করল ইসরাইল

ঢাকা, ১১ জুন, ২০২৫ (বাসস) : পরিবেশবাদীকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ মঙ্গলবার রাতে সুইডেনে ফিরেছেন। ইসরাইল তাকে ও অন্য কর্মীদের গাজার উদ্দেশ্যে যাওয়া একটি ত্রাণবাহী জাহাজ থেকে আটক করে। পরে কিছু কর্মীকে জোর করে দেশে ফেরত পাঠায়।

তেল আবিব থেকে এএফপি জানায়, গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও ত্রাণবাহী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’-এ ছিলো ১২ জন কর্মী। তাদের মধ্যে থুনবার্গসহ চারজনকে জোর করে ইসরাইল থেকে বের করে দেওয়া হয়। বাকিদেরও জোর করা হলে তারা তা অস্বীকার করেন। তবে সবাইকে ১শ’ বছরের জন্য ইসরাইলে প্রবেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের পক্ষে আইনি লড়াই করা অধিকার সংস্থা ‘আদালাহ’ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। 

আদালাহ আরো জানায়, স্বেচ্ছায় ইসরাইল ছাড়তে অস্বীকার করায় বাকি আটজনকে আটক করে মঙ্গলবার আদালতে তোলা হয়।

ইসরাইলি বাহিনী সোমবার আন্তর্জাতিক জলসীমায় ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’ পরিচালিত জাহাজটিকে আটক করে। পরে সেটিকে আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।

ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আটককৃতদের তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে নেওয়া হয়। সেখান থেকে থুনবার্গ প্রথমে ফ্রান্স, পরে সুইডেন ফিরে যান।

প্যারিসের ‘চার্লস দ্য গল’ বিমানবন্দরে ২২ বছর বয়সী থুনবার্গ বলেন, ‘আমাদের আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে অপহরণ করে জোর করে ইসরাইলে নেওয়া হয়েছে। এটি ইসরাইলের অসংখ্য অন্যায় কর্মকাণ্ডের মতো মানবাধিকারের আরো একটি চরম লঙ্ঘন।’

স্টকহোমে পৌঁছানোর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি যা নিয়ে ভয় পাই, তা হলো গণহত্যার সময় মানুষের নীরবতা।’

এদিকে, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো জানান, জাহাজে থাকা ফরাসি চার কর্মীকে আদালতের মুখোমুখি করা হবে।

এরআগে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্সে’এক পোস্টে লিখেছিলেন, পাঁচজনের বিরুদ্ধে ইসরাইলের আদালতে মামলা হবে এবং মাত্র একজন স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ করতে পারবেন।

বারো সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফরাসি কূটনীতিকরা ইসরাইলে থাকা ছয় ফরাসি নাগরিকের সঙ্গে দেখা করেছেন। এছাড়া, স্বেচ্ছায় দেশ ছাড়তে অস্বীকার করার মধ্যে রয়েছেন ফরাসি-ফিলিস্তিনি ইউরোপীয় এমপি রিমা হাসান।’

অন্য কর্মীরা ছিলেন ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রাজিল, তুরস্ক, সুইডেন, স্পেন ও নেদারল্যান্ডসের নাগরিক। তাদের উদ্দেশ্য ছিল গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া ও ইসরাইলি অবরোধ ভাঙা।

এদিকে ‘প্রতীকী কর্মসূচি’ হিসেবে, শত শত মানুষ তিউনিসিয়া থেকে লিবিয়া হয়ে গাজা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে।

জাতিসংঘ বলছে, গাজার সব বাসিন্দাই দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।

-‘মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ’-

ম্যাডলিন আটক করার নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক। তারা এটিকে ‘জঘন্য হামলা’ বলেছে।
ইরান একে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ‘ডাকাতি’ বলে অভিহিত করেছে।

গত মে মাসেও ফ্রিডম ফ্লোটিলার আরেকটি জাহাজ ‘কনসায়েন্স’ মাল্টার আন্তর্জাতিক জলসীমায় ড্রোন হামলার শিকার হয়। তখন কর্মীরা ইসরাইলকে এর জন্য দায়ী করে।

২০১০ সালে ইসরাইলি কমান্ডোরা তুরস্কের ‘মাভি মারমারা’ জাহাজে অভিযান চালায়। এটি গাজার নৌ অবরোধ ভাঙার একটি চেষ্টা ছিল। ওই ঘটনায় ১০ জন বেসামরিক নিহত হন।

রোববার ইসরাইলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরাইল কাফজ বলেন, ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের আগেও যে অবরোধ চালু ছিল, তা প্রয়োজন ছিল ফিলিস্তিনি সশস্ত্রদের অস্ত্র আমদানি রোধ করার জন্য।

তবে গাজায় মানবিক সংকট বাড়তে থাকায়, সাহায্য প্রবেশের জন্য ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়ছে।

দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি কিছু সরবরাহ আবার চালু হয়েছে। সরবরাহ কাজে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর সঙ্গে কাজ করছে ইসরাইল।

তবে মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলো বলছে, গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর কার্যক্রম ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সমস্যা আছে। এসব কারণে জাতিসংঘ এ সংগঠনের সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকার করেছে।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানায়, গত মে মাসের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত জিএইচএফ-এর বিতরণ কেন্দ্রগুলোর কাছে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় দপ্তর (ওসিএইচএ) জানায়, গাজার উত্তরে ইসরাইলি সামরিক অভিযান তীব্র হয়েছে। বহু হতাহতের খবর মিলেছে।

একই দিন জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন জানায়, গাজার স্কুল, উপাসনালয় ও সাংস্কৃতিক স্থানে ইসরাইলি হামলা ‘যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার’ শামিল।

তারা বলেছে, ‘স্কুল ও উপাসনালয়ে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের হত্যা করে ইসরাইল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে।’

এ বিষয়ে ইসরাইলি প্রতিক্রিয়া জানতে এএফপি যোগাযোগ করেছে, তবে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, মঙ্গলবার গাজা থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে। পরে তারা গাজার উত্তরের কয়েকটি এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরাইলের ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৫৪ হাজার ৯৮১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। জাতিসংঘ এ সংখ্যা ‘বিশ্বাসযোগ্য’ বলে মনে করে।

৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় বন্দি হওয়া ২৫১ জনের মধ্যে এখনো ৫৪ জন গাজায় আটক আছে। এর মধ্যে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।