শিরোনাম
শেরপুর, ২৮ মে ২০২৫ (বাসস) : আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে উন্নত জাতের ১ লাখ ১০ হাজার পশু প্রস্তুত করেছেন শেরপুরের খামারিরা। জেলায় স্থানীয় চাহিদা পূরণ করেও ২৪ হাজার ৫২৩ টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।
সরেজমিনে জেলা সদরের বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখা যায়, কোরবানির ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ততই ব্যস্ততা বাড়ছে শেরপুরের পশু খামারিদের। ক্রেতা এবং ব্যাপারীদের কাছে পশু আকর্ষণীয় করে তুলতে যত্নের কোনো ঘাটতি রাখছেন না তারা । খামারিরা গরু-মহিষকে কাঁচা সবুজ ঘাস, খড়, ভুসি এবং খৈল খাইয়ে মোটাতাজা করতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন। এ বছর ব্রাহমা, শাহিওয়াল, হলিস্টিন, দেশী ও ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন উন্নত জাতের গরু পালন করেছেন খামারিরা। তবে চোরাই পথে ভারতীয় গরুর প্রবেশ, ন্যায্য দাম না পাওয়া এবং গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভ কম হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, জেলার পাঁচটি উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১৩ হাজার ৭৬২ জন খামারি রয়েছেন। অনেক পরিবার ব্যক্তি উদ্যোগেও গরু, মহিষ ও ছাগল পালন করেছেন। এ বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলায় কোরবানির উপযোগী ১ লাখ ১১ হাজার পশু রয়েছে। এর মধ্যে জেলায় ৮৫ হাজার ৭৬৩টি পশুর চাহিদা রয়েছে। ঈদে জেলার চাহিদা মিটিয়েও ২৪ হাজার ৫২৩ টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে ।
সীমান্তঘেঁষা তিন উপজেলায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রাকৃতিক পরিবেশে দেশি গরু প্রস্তুত করা হচ্ছে। ক্ষেতের ঘাস ও পাহাড়ি লতাপাতা খাইয়ে বড় করা হচ্ছে গরুগুলোকে। প্রতিবছরের মত এবারও ক্রেতাদের মাঝে দেশীয় এসব গরুর চাহিদা বেশি। খামারিরা জানান, পাহাড়ে পর্যাপ্ত ঘাস এবং লতাপাতা থাকায় গরুগুলোর পেছনে আলাদা কোনো খরচ নেই। যে কারণে পাহাড়ে গরু পালনে তাদের লাভের পরিমাণ বেশি।
শেরপুর সদরের লছমনপুরের খামারি মোশাররফ মিয়া (৫৫) বলেন, প্রতিবছর আমরা কোরবানির উদ্দেশ্যে নানা জাতের গরু প্রস্তুত করি। তবে হঠাৎ গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা কিছুটা বিপাকে পড়েছি। শেরপুর সীমান্ত দিয়ে যেন ভারতীয় গরু প্রবেশ না করতে পারে সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
সদরের পাকুরিয়া ইউনিয়নের খামারি জামান মিয়া (৪৫) বলেন, এবার গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে গরু পালনে খরচ বেড়েছে। প্রতিদিন অনেক গরুর ব্যাপারী আসছেন গরু দেখছেন। দরদাম করছেন। শেষ পর্যন্ত যদি গরুর ন্যায্য দাম না পাই তাহলে আমার মত অনেক ছোট বড় খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সদরের কামারের চরে কথা হয় গরুর ব্যাপারী জুলহাস উদ্দিনের (৫০) সাথে। তিনি জানান, ঈদুল আযহার আগে সময় কম থাকায় ব্যস্ততা বেড়েছে তাদের। তাই সরাসরি খামার ঘুরে সুস্থ ও সবল গরু কিনছেন তারা। এছাড়া অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর গরুর দাম বেশি।
শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ভুঞা বলেন, ভারতীয় গরু যেন শেরপুরের কোন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্ত এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই সাথে হাটে জাল টাকা প্রতিরোধে সাদা পোষাকে বিশেষ নজরদারিতে থাকবে পুলিশ।
অতিরিক্ত জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, ঈদুল আযহার আগে খামারিদের নানা পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে কাজ করছে ভেটেরিনারি সার্জনরা। এছাড়া কৃত্রিম উপায়ে যেন কোনো খামারি গরু মোটাতাজা না করতে পারে সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখছি।