বাসস
  ২৮ মে ২০২৫, ১৪:২৮

বিলুপ্তপ্রায় বুনো ফলসায় রাঙল রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিলুপ্তপ্রায় বুনো ফলসা গাছ। ছবি: বাসস

{রেজাউল করিম মানিক}

রংপুর, ২৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) মূল ফটকের সড়ক ধরে পশ্চিম দিকে এগোলেই কেন্দ্রীয় মসজিদ। তার বাঁ দিক দিয়ে খানিকটা সামনে গেলেই রাস্তাটি মিশেছে পরিবহন পুলে। সেখানে উত্তর পাশের দেয়াল ঘেঁষে ছোট ছোট হলুদ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘ফলসা’ গাছ। বিলুপ্তপ্রায় গাছটিতে এখন ফুল ফোটার মৌসুম। কিছু ডালে ধরেছে ফলও। 

এ যেনো সবুজ প্রকৃতির মাঝে রঙের ফোঁটা ছিটিয়ে দেওয়া এক শিল্পীর কল্পনার ক্যানভাস। ফলসার এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করছেন প্রকৃতিপ্রেমী শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, এমন সুন্দর বুনোফল দেখে অবাক হয়েছি। হারিয়ে যেতে বসেছে এমন গাছটি ক্যাম্পাসে দেখতে পেয়ে আমরা অভিভূত।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সুবর্ণা রায় জানান, ফলসা ফল এখন আর গ্রামেও চোখে পড়ে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির একটি গাছ আছে শুনে, দেখতে এসেছি।

ফলসা মূলত মাঝারি আকারের পাতাঝরা গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এটি ছয় থেকে সাত মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। বাংলাদেশে এটি একটি স্বল্পপরিচিত সাধারণ ফল হলেও ভারত ও শ্রীলঙ্কায় এটির বাণিজ্যিক চাষ হয়। ফলসার আদিনিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। হিমালয়ের পাদদেশে এটি ভালো জন্মে। 

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে পথের ধারে কিংবা পতিত জমিতে একসময় অহরহ দেখা যেত। বীজ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করত পাখিরা, কারণ ফলসা তাদের খুবই প্রিয়। বর্তমানে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু জেলায় গাছটি টিকে থাকলেও পরিমাণে তা খুবই কম। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে দুটি ফলসা গাছ, একটি পরিবহন পুল এলাকায়, আরেকটি মিডিয়া চত্বরে।

ফলসার বৈজ্ঞানিক নাম গ্রেভিয়া এশিয়াটিকা। ঝোপালো স্বভাবের ফলসা গাছ দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন প্রকৃতির আঁচলে জড়িয়ে থাকা এক সাদাসিধে শোভা। গাছের বাকল লম্বা, আঁশযুক্ত এবং ধূসর বর্ণের। উচ্চতায় খুব একটা লম্বা নয়, তবে পাতার ঘনত্বে দৃষ্টি টানে সহজেই। পাতাগুলো ডিম্বাকৃতি, কিনারায় সূক্ষ্ম দাঁতের মতো খাঁজ—মতোসই রোদে হালকা খসখসে ভাব যেন রৌদ্রছায়ার খেলা। 

মার্চ-এপ্রিলে ডালে ফুটে ওঠে ক্ষুদ্র হলুদ ফুল, সেসব ফুলে ভনভন করে উড়ে বেড়ায় মৌমাছিরা। ফুল ঝরে গেলে ছোট ছোট সবুজ ফল আসে, দেখতে মটরদানার মতো। সময়ের সঙ্গে সে ফল রঙ বদলায়। সবুজ থেকে লাল হয়, শেষে হয়ে ওঠে কালচে বাদামি। তখনই যেন গাছের শোভা পূর্ণতা পায়।

ফলসা সাধারণত তাজা ফল হিসেবে খাওয়া হয়। পাকা ফল দিয়ে তৈরি হয় জুস, শরবত ও সিরাপ। এটি ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’-এর ভালো উৎস। পাশাপাশি এতে রয়েছে শরীরের জন্য উপকারী প্রোটিন, শর্করা, খনিজ পদার্থ, চর্বি, ক্যালসিয়াম ও আয়রন।

বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না বাসস’কে জানান, ফলসা গাছ তেমন বড় হয় না। এটি খাটো আকৃতির পাতাঝরা বৃক্ষ। মূল কাণ্ড থেকে ডালপালা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি উদ্ভিদ হিসেবেও এটি পরিচিত।

বেরোবির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও সৌখিন আলোকচিত্রী ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ক্যাম্পাসে তৃতীয়বারের মত একটি গাছে ফল ধরেছে। তবে, মিডিয়া চত্বরের গাছটিতে এখনো ফুল আসেনি। আগামী মৌসুমে সেটিতেও ফুল ও ফল আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

গ্রীস্মের ঝড়ো বাতাসে ফলসার পাতারা দুলে ওঠে, আর ফলগুলো গাঢ় রোদে ঝিলমিল করে। তখন মনে হয়, এটি নিছক বৃক্ষ নয়, হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি ফেরার গল্পও বলে।