শিরোনাম
ঢাকা, ২৭ মে, ২০২৫(বাসস): সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
তা না হলে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে সতর্ক করেছে বিএনপি। দলটি মনে করছে, জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে জন-আকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত।
একইসঙ্গে দলটি বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর উপদেষ্টা পরিষদের এক বিবৃতিতে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তা অস্পষ্ট। এতে নানা মহলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারর্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র নেতারা এসব কথা বলেন।
গতকাল ২৬ মে রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে দলের প্রতিক্রিয়া জানাতে জাতীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান, এমন একটি খবর যখন দেশে তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়, তখন বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আলোচনার প্রসঙ্গে তার প্রেস সচিবের মাধ্যমে সরকারের যে বক্তব্য পাওয়া গেছে, তাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় বিএনপি হতাশ হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল কোনো সময়ই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি, এখনও চায় না। কিন্তু আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে ডিসেম্বরের মধ্যে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে এসেছি।
সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একইসঙ্গে চলতে পারে। একইসঙ্গে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি ও ব্যক্তির অর্থাৎ দল ও মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।’
ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন অসম্ভব করে তোলা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, যত দ্রুত সম্ভব একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমেই পরাজিত শক্তির ইন্ধন এবং বিদেশি যড়যন্ত্র বন্ধ করা সম্ভব। সেজন্য অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
জাতীয় ঐক্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বিএনপির এই সাবেক মন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এদেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, জুলাই ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে অতি শীঘ্র রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা অতি জরুরি। এই লক্ষ্যে আমরা সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছি। সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ডকে আমরা সবসময় নিরুৎসাহিত করি এবং প্রতিরোধ করার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
এ সময় সরকার কালবিলম্ব না করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিনা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ।