শিরোনাম
ঢাকা, ২৬ মে, ২০২৫ (বাসস) : পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, পার্বত্য জনগোষ্ঠীকে নিজস্ব সত্তা বজায় রেখে মূল স্রোতধারার সাথে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘পার্বত্য জনগোষ্ঠীর বড় সমস্যা হলো তাদের কী দরকার তা তারা জানে না, বা নিজেদের প্রয়োজনটুকু আদায় করতে জানে না। এসডিজির পরিপূর্ণ ফল লাভ করতে হলে তাদের অগ্রাধিকার নিজেদেরই ঠিক করতে হবে এবং উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে যথাযথ ফোরামে সেগুলো উত্থাপনের কৌশল অর্জন করতে হবে।’
আজ রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স অডিটোরিয়ামে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে এসডিজি স্থানীয়করণ ও ত্বরান্বিতকরণ’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
পার্বত্য জনগোষ্ঠীর হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষা সংরক্ষণে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বান্দরবানের আলীকদমে ৬ থেকে ৭ জন লোক আছে যারা কেবল তাদের মাতৃভাষায় কথা বলে থাকে। তাদের মৃত্যুর সাথে সাথে তাদের এই ভাষাও হারিয়ে যাবে। এসব জনগোষ্ঠীর হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগী হতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জায়গায় শিক্ষা ও জীবন-জীবিকা তথা জীবনযাত্রার উন্নয়ন এক না। তাই পার্বত্য এলাকায় কোয়ালিটি এডুকেশন, রেসিডেনসিয়াল এডুকেশন সিস্টেম চালু করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকার সর্বস্তরে প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতসহ উপজেলা পর্যায়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এবং জেলা পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষা তথা সকল জায়গায় কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে চাই।
সুপ্রদীপ চাকমা রাঙ্গামাটির সম্ভাবনাময় কাপ্তাই লেক প্রসঙ্গে বলেন, কাপ্তাই লেকের উন্নয়ন করতে হবে। কাপ্তাই লেকের মাছ অর্থনৈতিকভাবে দেশের উন্নয়ন ঘটাতে পারে।
তিনি বলেন, পাহাড়ের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও কাপ্তাই লেককে কাজে লাগাতে পারলে অল্প সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের চেহারা পালটে দেয়া যাবে।
বর্তমান সরকার সকল সুযোগ সুবিধা দিতে প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার চিন্তা ও সাধনায় সুন্দর এই বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই এ সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের পাশাপাশি ১১ টি দেশীয় জাতি গোষ্ঠীর ১৬ লাখেরও বেশি মানুষের আবাসস্থল। পার্বত্য চট্টগ্রামে এসডিজি ত্বরান্বিত করার জন্য ১৬৯ টির মধ্যে ৩৯ টি ইন্ডিকেটরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সমতল এলাকার সাথে পার্বত্য অঞ্চলে এ সমস্ত ইন্ডিকেটর সব জায়গায় সমান নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের শ্রেণি, গোষ্ঠী, সংস্কৃতি, খাদ্য, পোশাক-পরিচ্ছেদ পরিবেশ ও মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও পাহাড়ি মানুষের কনসেপ্ট বিবেচনা করে একটি লক্ষ্য সেট করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউএনডিপির মাধ্যমে একটি সম্ভাব্যতা করা হয়েছে।
কর্মশালায় উন্মুক্ত আলোচনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের তীব্র পানি সংকট, বহুমাত্রিক দারিদ্র্য, পরিবেশগত দুর্বলতা, দুর্গম এলাকায় বিদ্যালয়ের অভাব, লোকাল নলেজকে কাজে লাগানো, বাজার ও বাজেট মনিটরিং এবং তথ্যের অভাবসহ একাধিক চ্যালেঞ্জের কথা ওঠে এসেছে। উন্মুক্ত আলোচনায় বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এই স্টাডি মূল্যায়ন করা হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে কর্মশালায় এআরও বক্তব্য রাখেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, কানাডিয়ান হাইকমিশনার অজিত সিং, এক্সিলারেশন ইন সিএইচটি উপস্থাপক ড. আবু ইউসুফ, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দয়ারত্নে ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এসডিজি লোকালাইজেশন এক্সপার্ট মো. মনিরুল ইসলাম।