শিরোনাম
নাটোর, ২৬ মে ২০২৫ (বাসস) : ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনে অগ্রগামী ভূমিকায় আছেন কাজী তৌহিদুল আলম। সফটওয়্যার তৈরির পাশাপাশি ইউনিক কিউআর কোড নিরাপত্তা ট্যাগ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তিনি। নাটোরের সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে শুধু নিজের অবস্থান সুসংহত করাই নয়, এই সফলতার যাত্রায় তিনি পথ দেখিয়েছেন অন্য উদ্যোক্তাদের।
তৌহিদের ধ্যান-জ্ঞানের ক্ষেত্র এখন পণ্যের কিউআর কোড নিরাপত্তা হলোগ্রাম। এন্টি কাউন্টার ফেটিং টেকনোলজির মানোন্নয়ন নিয়ে তিনি কাজ করছেন। ভারতে আমদানিকৃত ডেভিডফ কফির জন্যে তৌহিদ ৩৮ লক্ষ নিরাপত্তা ট্যাগ সরবরাহ করেছেন। নাটোরের গোল্ড কসমেটিকস-এর উৎপাদিত পণ্যের নিরাপত্তা ট্যাগও তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। ব্যবসায়ের প্রচারণা ও প্রসার ঘটাতে তিনি নাটোরের পাশাপাশি রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় ‘ডিজি স্ক্যান’ নামে ফার্ম হাউজের কার্যক্রম শুরু করেছেন।
কাজী তৌহিদুল আলম বলেন, ‘পণ্যে ব্যবহৃত হলোগ্রাম স্ক্যান করে আসল পণ্য যাচাইকরণের মাধ্যমে ক্রেতাদের আস্থা তৈরির কাজ শুরু করেছি আমরা। আমাদের তৈরি নিরাপত্তা হলোগ্রাম শুধু আসল পণ্যের নিশ্চয়তা, মেয়াদ, ব্যাচ নম্বরই প্রদান করবে না, পাশাপাশি একই ট্যাগ একাধিকবার ব্যবহারের প্রবণতা রোধ করবে’।
কাজী তৌহিদের প্রায় দেড় দশকের পথ পরিক্রমণ শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। সদ্য কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে উদ্দীপ্ত হয়েছেন। দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ তখন শেয়ার বাজারে ব্যবসা করছেন। প্রতি কর্মদিবসে স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার দরে চোখ রাখতেই হবে। কিন্তু স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইট আর টেলিভিশন ছাড়া তো শেয়ার বাজারের শেয়ার দর জানার উপায় নেই।
লক্ষ লক্ষ শেয়ার ব্যবসায়ীদের ব্রাউজিংয়ের ফলে স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটের সার্ভার যখন সঠিকভাবে কাজ করতে পারছিলো না, ঠিক ঐ সময়ই শেয়ার ব্যবসায়ী কাজী তৌহিদ মোবাইল ফোনে ব্যবহার উপযোগী শেয়ার বাজারের নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করেন। সে সময় কাজী তৌহিদের শেয়ার বাজার ওয়েবসাইট শেয়ার ব্যবসায়ীদের আশার আলো দেখিয়েছিল।
২০১১ সালে ‘ফ্রিল্যান্সার ডট কম’ মার্কেট প্লেসে নিবন্ধিত হন কাজী তৌহিদ। সেসময়ে ইংল্যান্ডের লরা উল্ফ নামে জনৈক সাংবাদিকের ডেইলি ব্লগ তৈরির কাজ পান তিনি।
এই ব্লগ তৈরি করে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে জীবনের প্রথম উপার্জন করেন। ২০ পাউন্ড উপার্জনের মাধ্যমে স্বপ্নগুলো যেন আকাশ ছুঁয়ে যেতে চায়। প্রায় একই সময়ে তিনি আমেরিকান ব্যবসায়ী নিকো রিজেন্টের স্টক এক্সচেঞ্জ ওয়েবসাইট তৈরি করে উপার্জন করেন ৩০০ ডলার। ঐ ওয়েবসাইটে দৃশ্যমান হয় নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার দর। আমেরিকার আইটি ব্যবসায়ী জিম কিংয়ের পার্পোল কাউ ক্রিয়েটিভ এজেন্সির ওয়েবসাইট তৈরি করে উপার্জন করেন ৫০ ডলার। এই এজেন্সির আরো কাজ করে জিম কিংয়ের আস্থা অর্জন করেন তৌহিদ। জিম কিং তাকে তার এজেন্সিতে ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে চাকুির দেন। এই এজেন্সির হয়ে তিন বছরে তৌহিদ তৈরি করেছেন শতাধিক ওয়েবসাইট। চাকুরিতে প্রথম দুই বছর সপ্তাহে ৫০ ডলার পারিশ্রমিক পেলেও তৃতীয় বছর থেকে পারিশ্রমিক বাড়িয়ে ১০০ ডলার করা হয়।
আমেরিকার কলোরাডোর সেন্টার ম্যাস মিডিয়া ফার্মের সাথে সংযুক্ত হয়ে কাজী তৌহিদ মাসে এক হাজার ২০০ ডলার পেতেন। এরপর ফ্লোরিডার দাদা ডিজিটালে ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে যোগদান করেন মাসিক বেতন এক হাজার ৬০০ ডলারে। ওই ফার্মে চার বছর কাজ করেন। এরপরই কাজী তৌহিদ আর চাকরি না করে স্বতন্ত্রভাবে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করেন। নিজের ভাই, আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতজনসহ অসংখ্য ব্যক্তি তৌহিদের কাছ থেকে সহযোগিতা আর পরামর্শ নিয়ে এখন সফল ফ্রিল্যান্সার।
কাজী তৌহিদ বলেন, ‘ আমার কাছ থেকে কাজ শেখা মানুষগুলো উপার্জন করছে, এটি অনেক প্রশান্তির’।
বর্তমানে তিনি পণ্যের যথার্থতা যাচাইকরণে ইউনিক কিউআর কোড পদ্ধতির উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছেন। এই খাতকে অদূর ভবিষ্যতে অপার সম্ভাবনাময় খাত উল্লেখ করে কাজী তৌহিদ বলেন, সকল পণ্যের কিউআর কোড নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে পণ্যের উৎপাদক, বিপণন ব্যবসায়ী, পণ্যের ক্রেতা এবং সরকার-সকলের স্বার্থ সমুন্নত থাকবে।