বাসস
  ২৪ মে ২০২৫, ১৯:৪৯

চলতি বর্ষায় চট্টগ্রামে জলবদ্ধতা কমে ৫০-৬০ শতাংশে নেমে আসবে : চসিক মেয়র

চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন শনিবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সম্মেলন কক্ষে ‘চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। ছবি: বাসস

চট্টগ্রাম, ২৪ মে, ২০২৫ (বাসস): চলতি বর্ষায় নগরীর জলবদ্ধতা কমে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশে নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের অধীনে নগরীর বারই খালের খনন ও পরিচ্ছন্নতার কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ, বাকি কাজটুকু অচিরেই শেষ হবে, এটি সম্পন্ন হলে নগরীর দীর্ঘদিনের যে জলাবদ্ধতা, তার কিছুটা সুফল নগরবাসী এই বর্ষা মৌসুমে পাবে। 

শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতি-চট্টগ্রাম শাখার আয়োজনে ‘চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতি-চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অভীক ওসমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার ব্যুরো প্রধান ভূঁইয়া নজরুল।

নগর সরকারের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামে দায়িত্বশীল সব প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত ভূমিকা পালন করতে হবে। তাই আমি দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকেই নগর সরকারের ওপর সবসময় গুরুত্বারোপ করে আসছি। এমনকি আমি প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারকেও এ বিষয়ে অবহিত করেছি। জলাবদ্ধতা এবং নগরের সব কাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে অবশ্যই আমাদের নগর সরকারের দিকে যেতে হবে।

গণমাধ্যমকর্মী ও নাগরিক সমাজের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, আপনারা এই বৃষ্টির সময় আমাদের জানান, কোন জায়গায় পানি জমে আছে, তাহলে আমাদের পানি নিস্কাশনের কাজ সহজ হবে। আমরা বর্ষার সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করতে পারবো। নগরীর অনেক জায়গায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চলমান কাজের বাঁধের জন্য পানি উঠছে, ভবিষ্যতে বাঁধ খুলে দিলে সেটি আর উঠার সম্ভবনা নেই। এর পরেও যদি পানি উঠে সেটি খুঁজে বের করার জন্য আমরা কাজ করবো। আমাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে, লুকিয়ে রাখলে হবেনা। কারণগুলো চিহ্নিত করতে না পারলে জলবদ্ধতা কমবেনা। তাই গণমাধ্যমকে জলবদ্ধতা সৃষ্টির কারণগুলো সবার সামনে তুলে ধরতে হবে।

ভূঁইয়া নজরুল বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে গত ৪ বছরে জলাবদ্ধতায় নালার পানিতে ভেসে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত কিছুদিন আগে একটি শিশু নালায় ভেসে যাওয়ার ৩৬ঘন্টা পর উদ্ধার হয় চাক্তাই খালে। এর দায় আমরা কেউ এড়াতে পারি না। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের প্রকল্প অনুমোদনের আগে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করা হয় না, ফলে প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও সেটি সমন্বয়হীনতার কারণে বাস্তবায়ন হয়না। নগরীর ৭০ লাখ মানুষের বর্জ্য গিয়ে পড়ে নালায়, পাহাড় কাটার ফলে সব মাটি গিয়ে পড়ে নালায়, পলিথিনের অপরিল্পিত ব্যবহারের ফলে সেটিও যত্রতত্র পড়ে থাকে, ফলে নালা ভরাট হয়ে যায়। যার ফল ভোগ করছি আমরা।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন করতে হলে পাহাড় কাটা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় সরকারি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেখানে বিভিন্ন পার্ক করা যেতে পারে। বক্তারা বলেন, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক করতে হবে। আবর্জনাকে সম্পদে পরিণত করতে হবে। ক্লাব কালচার সৃষ্টির মাধ্যমে তরুণদের কাজে লাগাতে হবে।
 
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর এস. এম. নছরুল কদির, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, জনসংযোগ সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি এ. এস. এম. বজলুল হক, পেশাজীবী নেতা ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, ডা. একেএম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ্ নওয়াজ, আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মনজারে খোরশেদ আলম, সিডিএ’র বোর্ড মেম্বার স্থপতি ফারুক আহমেদ, স্থপতি জেরিনা হোসেন, স্থপতি আশিক ইমরান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. শহীদুল হক এবং অধ্যক্ষ সুরাইয়া বেগম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন- সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ সাকী।