বাসস
  ২৪ মে ২০২৫, ১৩:২৩

নওগাঁর মান্দায় টানা বৃষ্টিতে পচে যাচ্ছে ক্ষেতের পাকা ধান 

ছবি : বাসস

বাবুল আখতার রানা

নওগাঁ, ২৪ মে ২০২৫ (বাসস) : জেলার মান্দা উপজেলায় গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে মাঠে পেকে থাকা বোরো ধান কাটতে পারছেন না কৃষকেরা। কোনো কোনো জমিতে ধান কাটলেও শুকাতে না পারায় তা আবার ভিজে যাচ্ছে। ফলে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। আবহাওয়া খারাপ থাকায় ধান শুকানোর সুযোগ না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।

স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আমন ধান কেটে নেওয়ার পর ওইসব জমিতে সরিষা ও আলুর আবাদ করা হয়েছিল। এ কারণে বোরো ধান রোপণ করতে কিছুটা দেরি  হয়ে যায়। তার ওপর জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকেই একটানা বৃষ্টিতে পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছেন না তারা। এতে চরম ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বোরো চাষিরা। 

স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত সাত দিনে গড়ে প্রতিদিন বৃষ্টিপাত হয়েছে প্রায় ২০ মিলিমিটার। এ সময়ে কখনো কখনো আকাশ মেঘলা থাকলেও টানা বৃষ্টির নজির সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যায়নি। এসময় সাধারণত খরা থাকে। কিন্তু এ বছরের চিত্র পুরোটাই উলটো।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় আলু আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে এবং সরিষা হয়েছে ৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে আলু ও সরিষা কেটে বোরো ধান রোপণ করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এই দেরির কারণে এখন ধান কাটার মৌসুম পড়েছে বৃষ্টির মধ্যে । 

উপজেলার নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক আবদুল জলিল বলেন, আমন ধান কাটার পর তিন বিঘা জমিতে আলুর চাষ করি। এরপর সেই জমিতে বোরো ধান লাগাই। পাকা ধান কেটে শুকানোর জন্য জমিতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সেই ধান আর ঘরে তুলতে পারছি না। ক্ষেতেই ধান পচে যাচ্ছে। খুব বিপদে আছি।

একই গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, সুযোগ বুঝে কিছু ধান কেটেছি। কিন্তু বৃষ্টিতে ধান আবার ভিজে  নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গত ৫-৬ দিনে একদিনও পুরো শুকনো দিন পাইনি। 

জানা যায়, অনেক প্রান্তিক কৃষক বোরো ধান রোপণের সময় সার ও কীটনাশক বাকিতে কিনেছেন। এখন শুরু হয়েছে হালখাতার মৌসুম। বাকি পরিশোধের জন্য তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাঠ থেকে ধান কেটে ঘরে তুলতে না পারায় দোকানের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না তারা। 

দেরিতে রোপণ করা হলেও বোরো ধান সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু থেকেই  কাটা ও মাড়াই শুরু হয়। কিন্তু এ বছর ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে সেই ধারা ব্যাহত হয়েছে। বৃষ্টি না থামলে ফলনের বেশ বড় একটা অংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আহসান হাবীব বাসসকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। রোদ না থাকায় কৃষকেরা ক্ষেতের পাকা ধান কাটতে পারছে না। আবহাওয়া ভালো না হলে বোরো চাষিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন জানান, এ বছর মান্দা উপজেলায় ১৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আবাদ হয় ১৯ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। এতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। একটানা বৃষ্টিতে বোরো ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় আনুমানিক ২৫ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  

তিনি বলেন, এ বছর অতি বৃষ্টির কারণে দেরিতে রোপণ করা ধান কৃষকেরা কাটতে পারছেন না। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। একই সাথে কৃষকদের দ্রুত ধান কাটতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।