শিরোনাম
লক্ষ্মীপুর,২৪ মে ২০২৫(বাসস): এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। এ সময়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ার কথা থাকলেও জেলার মেঘনা নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। এতে করে মাছ ঘাটগুলোতে অলস সময় পার করছেন জেলে ও আড়তদাররা। মাছ না পাওয়ায় হতাশ জেলেরা। আড়তগুলো খালি পড়ে আছে। ঘাটে ইলিশ কিনতে এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন উৎসাহী ক্রেতারা।
চাঁদপুর জেলার ষাটনল হতে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার মেঘনা নদীর নিম্ন অববাহিকায় ১০০ কি:মি: এলাকা ইলিশ মাছের অভয়ারণ্য হিসেবে চিহ্নিত। ইলিশ মাছের নির্বিঘ্ন প্রজনন ও ইলিশের পোনা রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নদীতে মাছ ধরা নিষেধ ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরও নদীতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে জেলেদের। সামনের দিনগুলোতে যদি মাছ পাওয়া না যায়, তাহলে দাদনের টাকা কীভাবে শোধ করবে তাই নিয়ে দু:চিন্তায় রয়েছেন বেশিরভাগ জেলে।
জানা যায়, মেঘনা নদীতে নাব্যতা সংকট ও ডুবোচরের কারণে সাগর থেকে ইলিশ আসার পথে বাধার মুখে পড়ছে। এ কারণে মেঘনায় মাছ ধরা পড়ছেনা। আবার সামান্য ইলিশ ধরা পড়লেও তা আকাশ ছোঁয়া দাম। এক কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা। তবে মাস শেষে ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছে মৎস্য বিভাগ।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রায় ৫২ হাজার জেলে রয়েছে। এদের মধ্যে নিবন্ধিত ৪২ হাজার। এদের সবাই মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার একশ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করেন এখানকার জেলেরা। এসব এলাকার ছোট-বড় প্রায় ৩০টি মাছ ঘাটে আড়তদার ও জেলেরা মাছ না পাওয়ায় অলস সময় পার করছেন। মাছ না পাওয়ায় খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা। ইলিশের এমন দুর্দিনে অনেকটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেরা। অর্থাভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে জেলে পরিবারগুলো।
স্থানীয় জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দিন-রাত নদীতে জাল ফেলে যে মাছ পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকার তেলের খরচও মিলছেনা। রোদ বৃষ্টিতে নদীতে খাটলেও মিলছেনা প্রত্যাশিত ইলিশ। এ পরিস্থিতিতে নদীতে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছেন মেঘনা পাড়ের জেলেরা। পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা না পড়ায় মাছঘাটে নেই প্রাণ। জমছে না ইলিশের হাট। বাজারে ইলিশের সরবরাহ নাই বললেই চলে। তাই সামান্য কিছু ইলিশ পেলেও দাম চড়া। নিয়মিত আয়ের মৌসুমে আয় রোজগার না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলেরা।
মজু চৌধুরীর হাটের মাছের আড়ৎদার মিন্টু বাসসকে বলেন, গত বছর এমন মৌসুমে ঝাঁক ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়েছে। কিন্তু এবার নদীতে ইলিশ খুবই কম। মৌসুমের শুরুতে ইলিশ না পেয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন জেলেরা। গত বছর এ সময়ে কয়েক টন মাছ আমদানি-রপ্তানি হত। কিন্তু এবার মাছ নাই। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।
তিনি জানান, ইলিশ মাছ ধরে জেলেরা তাদের আড়তে বিক্রি করবে এমন শর্তে আড়তদারদের কাছ থেকে দাদন নিয়েছেন। নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা না পড়ায় আড়তে মাছ আসছে না। জেলেরা দেনাও শোধ করতে পারছে না। এবার দাদনের টাকা উঠানোই কঠিন হয়ে পড়বে।
মজু চৌধুরীর হাটে ইলিশ কিনতে এসেছিলেন সফিক উল্যাহ, রহমত উল্যা ও আবদুল খালেক। তারা বলেন, ইলিশ কিনতে এসেছি। এসে দেখি ঘাটে কোনো ইলিশ নেই। যে দুই একটি মাছ পাওয়া গেছে, সেগুলোর দামও অনেক বেশি। এক কেজি ওজনের তিনটি মাছ দেখা গেছে। দাম শুনে আর কিনতে পারিনি। দাম চাচ্ছে প্রতি কেজি তিন হাজার টাকা। তাই মাছ না কিনেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বাসসকে জানান, নদীতে ডুবোচর ও নাব্যতা সংকটের কারণে ইলিশ চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়। প্রচুর বৃষ্টিপাত ও নদীতে পানি বাড়লে ইলিশ ধরা পড়বে। নদীর মোহনা থেকে এখন গভীর সমুদ্রে চলে গেছে ইলিশ। মৌসুমের শুরুতে ধরা না পড়লেও আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশ্বাস দেন এই মৎস্য কর্মকর্তা। তিনি জানান, এবার ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৫শ মে.টন।