বাসস
  ২১ মে ২০২৫, ১৭:৪৮
আপডেট : ২১ মে ২০২৫, ১৭:৫৭

কার্গো চার্জ কমানোর সুপারিশ বেবিচকে’র

।। তানজিম আনোয়ার।।

ঢাকা, ২১ মে, ২০২৫ (বাসস) : ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের পর আকাশপথে পণ্য পরিবহন সক্ষমতা বাড়াতে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে ল্যান্ডিং, পার্কিং ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং চার্জ কমাতে মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

বুধবার বেবিচকে’র ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, সোমবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে এ সুপারিশ জমা দেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ অনুসারে, বিদেশে পণ্য পরিবহন সহজ ও সাশ্রয়ী করতে প্রস্তাব করেছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়টি এখন মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একমাত্র গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে পরামর্শ করে এ প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে কলকাতা ও দিল্লির মতো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহনের চার বছরের চুক্তি বাতিলের পর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। সরকার ইতোমধ্যে বিমানবন্দরে অবকাঠামো সম্প্রসারণ, শুল্ক প্রক্রিয়া সহজতর করা ও খরচ কমানেরা মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

এর আগে বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ভারতের সিদ্ধান্তের ফলে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিয়েছে, যার সরবরাহ ব্যয় কমাতে শুল্ক সংশোধনের বিষয়টি রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা পণ্য পরিবহনের খরচ কমাতে ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্টের চেয়ে আমাদের পরিষেবাগুলোকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বাসস’কে বলেন, বেবিচক ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স উভয়ই নিরবচ্ছিন্ন পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করতে যৌথভাবে ব্যাপক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে। 

তিনি বলেন, সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করতে আমরা বিদ্যমান শুল্ক সংশোধনের জন্যও একসঙ্গে কাজ করছি। বাহ্যিক বাধাবিঘ্নের পরেও যেন বিমানে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম অব্যাহত থাকে, সেজন্য  আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা খুব শিগগিরই হ্রাসকৃত হ্যান্ডলিং চার্জ ঘোষণার আশা করছি।

ক্রমবর্ধমান কার্গো চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত ২৭ এপ্রিল পূর্ণাঙ্গ কার্গো কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিগগিরই চট্টগ্রাম বিমানবন্দরেও এ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স দ্রুত করার জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

চলতি বছরের শেষ দিকে চালু হতে যাওয়া শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল কার্গো খাতে বড় পরিবর্তন আনবে। এই টার্মিনালের মাধ্যমে বার্ষিক রপ্তানি পণ্য পরিবহন ক্ষমতা ২ লাখ টন থেকে ৫ লাখ ৪৬ হাজার টনে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ টার্মিনালে থাকবে ৩৬ হাজার বর্গমিটারের পৃথক কার্গো জোন, আধুনিক অটোমেশন ও সম্প্রসারিত সংরক্ষণাগার।

বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের প্রস্তুতি হিসেবে আমাদের অবকাঠামো দ্রুত সম্প্রসারণ করা হচ্ছে, যাতে দুই থেকে তিনগুণ বেশি পণ্য পরিবহন করা যায়। 

তিনি বলেন, সিলেটে চালু হওয়া নতুন কার্গো টার্মিনাল জাতীয় পণ্যবাহী বিমান পরিবহন নেটওয়ার্কে উল্লেখযোগ্য ক্ষমতাও যোগ করেছে। এই উন্নতিগুলো আমাদেরকে আরও স্বাধীন ও দক্ষতার সঙ্গে পণ্য পরিবহনের সুযোগ করে দেবে, যার ফলে পরিচালন দক্ষতা ও রাজস্ব উভয়ই উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে বছরে প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার টন পণ্য আকাশপথে পরিবহন করা হয়। এর মধ্যে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ পণ্য বহন করে বিমান বাংলাদেশের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ। 

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নিজের ফ্লাইট ছাড়াও এমিরেটস, ক্যাথে প্যাসিফিক, কাতার এয়ারওয়েজ, তুর্কি ও ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের কার্গো ফ্লাইটে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিচ্ছে। এসব এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে একমুখী কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করে।

রপ্তানিকারকরা দীর্ঘদিন ধরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লজিস্টিক অদক্ষতা ও  অপর্যাপ্ত অবকাঠামো নিয়ে অভিযোগ করে আসছেন। সীমিত স্থান ও অপর্যাপ্ত গ্রাউন্ড-হ্যান্ডেলিং ব্যবস্থার কারণে বৃহত্তর মালবাহী বিমানের পরিচালনাও সীমিত।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফা)’র তথ্য অনুসারে, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের আগে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৬শ’ টন গার্মেন্টস পণ্য ভারতীয় বিমানবন্দর হয়ে রপ্তানি হত, যা মোট রপ্তানির প্রায় ১৮ শতাংশ।

অন্যদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ মূলত প্রতিদিন ৩শ’টনের জন্য নির্মিত হয়েছিল। এটি পিক পিরিয়ডে এক হাজার ২শ’ টনেরও বেশি পণ্য পরিবহন করে।

বাফা’র তথ্য অনুসারে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতি কেজিতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য ০.২৯ মার্কিন ডলার খরচ হয়, যা দিল্লি বিমানবন্দরে নেয় মাত্র ০.০৫ মার্কিন ডলার। ঢাকা বিমান বিমানবন্দরে প্রায় ছয় গুণ বেশি খরচ লাগে। ঢাকায় জেট জ্বালানিও ৩০ শতাংশ বেশি ব্যয়বহুল।

গত সপ্তাহে জট জ্বালানির দাম কমানোর ঘোষণা কিছুটা স্বস্তি আনতে পারে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা।

ভারতের সিদ্ধান্ত বিদ্যমান পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করলেও বিমান পরিবহন সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা বিশ্বাস করেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি আঞ্চলিক বিমান কার্গো হাব হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে।