বাসস
  ১৯ মে ২০২৫, ১২:৩৮

নওগাঁয় প্রস্তুত প্রায় ৮ লাখ পশু, উদ্বৃত্ত ১২ হাজার কোটি টাকার সম্পদ

কোরবানির পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর ছোট-বড় খামারিরা। ছবি: বাসস

।। বাবুল আখতার রানা।।

নওগাঁ, ১৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : ঈদুল আযহার প্রধান আকর্ষণ কোরবানির পশু। বর্তমানে কোরবানির পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর ছোট-বড় খামারিরা। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে খামারিরা প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজা করেছেন গরু, ছাগল, ভেড়া, গারল ও মহিষ। খামারিদের বাঁচাতে বিদেশ থেকে গরু আমদানি না করতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন খামারিরা। 

ঈদুল আযহা উপলক্ষে জেলায় প্রস্তুত করা হয়েছে ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩২০টি গবাদি পশু। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার পশু বিক্রি করা যাবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলার ১১টি উপজেলার ছোটবড় ৩৮ হাজার ৫৭৩ জন খামারি তাদের গবাদিপশু প্রস্তুত করেছেন। স্পেশাল অফার হিসেবে অনেক খামারি ঈদের আগে ক্রেতাদের ক্রয় করা গরু বিনামূল্যে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার সুবিধা দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। ক্রেতারাও বাড়তি ঝামেলা এড়াতে সেই সুযোগ গ্রহণ করে খামারেই কোরবানির গরু কিনছেন।

সূত্র জানায়, চলতি বছর জেলায় কোরবানির জন্য গবাদিপশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪৩৭টি। আর প্রস্তুত করা হয়েছে ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩২০টি  গবাদি পশু। স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর বাড়তি গবাদিপশু চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা ও ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পশু ব্যবসায়ীরা সরাসরি এসে নওগাঁর বিভিন্ন পশুর হাট থেকে  গবাদিপশু কিনে নিয়ে যায়। এবারের কোরবানির গরুগুলো খামার থেকেই ৫০০-৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

রাণীনগর উপজেলার আরকে অ্যাগ্রো কমপ্লেক্সের খামারি আসাদুজ্জামান বাসসকে বলেন, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে খামারে এবার শাহীওয়াল, ফিজিয়ান ও দেশী জাতের শতাধিক ষাঁড় মোটাতাজা করা হয়েছে। তবে প্রতিনিয়তই প্রাকৃতিকভাবে পশু মোটাতাজাকরণের সকল পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আসন্ন ঈদুল আযহায় হাটগুলোতে যদি গবাদিপশুর দাম ভালো পাওয়া যায় তাহলেই খামারিরা বাঁচবে। আর যদি বিদেশ  থেকে গরু আমদানি করা হয় তাহলে দেশের সকল শ্রেণির খামারিরা লোকসানে পড়বে। 

তিনি খামারিদের বাঁচাতে বিদেশ থেকে গরু আমদানি বন্ধ এবং গবাদিপশুর খাদ্যের দাম কমাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানান। 

রাণীনগর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: রফি ফায়সাল তালুকদার বাসসকে  জানান, প্রাকৃতিক উপায়ে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে প্রতিনিয়তই প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে খামারিদের সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে খামারিদের অংশগ্রহণে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার করে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে ভোক্তাদের কি কি মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে সেই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে খামারিরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে গবাদি পশু মোটাতাজা করছেন কি না সেই বিষয়ে সব সময় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে। তাই এবার ভোক্তারা অনেকটাই প্রাকৃতিক উপায়ে বড় করা গবাদিপশুগুলো কোরবানি দিতে পারবেন বলে আশা করি।’

জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো. মাহফুজার রহমান বাসসকে বলেন, এবার স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর চার লক্ষাধিক গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকছে। যা জেলার বিভিন্ন হাটে বিক্রির মাধ্যমে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা বিক্রির আশা করা হচ্ছে। এবার যেহেতু বিদেশ থেকে কোন গবাদিপশু আমদানি করবে না সরকার, তাই জেলার ছোট-বড় সকল শ্রেণির খামারিরা গবাদিপশুর ভালো দামে পাবেন বলে আশা করছি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে যেন কোন ঝামেলা ছাড়াই সুন্দর পরিবেশে নওগাঁর হাটগুলো থেকে গবাদিপশু কিনতে পারেন সেই লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরও একযোগে কাজ করছে।

নওগাঁর পুলিশ সুপার সাফিউল সারোয়ার বাসসকে বলেন, পশুর হাটকে কেন্দ্র করে জেলার কোন সড়ক কিংবা মহাসড়কে যেন কেউ কোন চাঁদা আদায় করতে না পারে সেজন্য জেলা পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া জেলার প্রতিটি হাটের পরিবেশ সুন্দর রাখার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি পোষাকধারি পুলিশের সঙ্গে সাদা পোষাকধারি পুলিশ সদস্যরাও পশুর হাটে দায়িত্ব পালন করবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বাসসকে বলেন, জেলার হাটগুলোতে যেন কেউ গবাদিপশুসহ সকল পণ্যের অতিরিক্ত খাজনা আদায় করতে না পারে সে লক্ষ্যে সারাবছরই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলমান রয়েছে। তবে কোরবানির সময় কোন চক্র যেন কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ে কোন ধরনের অরাজকতার সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে প্রতিটি হাটে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু করা হয়েছে। এই অভিযান আরো কঠোর করা হবে। কোরবানির পশু ক্রয় ও বিক্রয় সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিগত সময়ের চেয়ে এবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে মাঠ পর্যায়ে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের দল সব সময় কাজ করবে।