বাসস
  ১৩ মে ২০২৫, ১৯:৫১
আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, ২০:৫০

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করলো বিডা

মঙ্গলবার রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বিডা প্রধানের বৈঠক। ছবি : পিআইডি

ঢাকা, ১৩ মে, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশে টেকসই বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নীতিগত ধারাবাহিকতা, চলমান সংস্কার কার্যক্রম এবং এর সাম্প্রতিক অগ্রগতির বিষয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দলের পরামর্শ ও সুপারিশ গ্রহণের লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিডার প্রধান কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৭টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বিন হারুন।

সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিএম), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টি, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

আশিক চৌধুরী তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ, এটি দলীয় বা রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে।’

বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিডা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে আশিক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানামুখী সংকট রয়েছে। এসব সংকট থেকে উদ্ধারের জন্য আমরা এখন কী করছি, সামনের ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে কী করব এসব বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হবে বলে প্রত্যাশা করি।’

সভায় বিডার কার্যক্রম নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেন বিডার হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি। তিনি সংস্কার পরিকল্পনা এবং অগ্রগতি প্রতিবেদন ও বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেন।

তিনি জানান, ২শ’ জনের বেশি স্থানীয় বিনিয়োগকারী ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পাঁচটি সমস্যা চিহ্নিত করেছে বিডা। এগুলো হলো সরকারি পরিষেবার মান, নীতির ধারাবাহিকতা, ইন্ডাস্ট্রি কনসালটেশন, দুর্নীতি দূরীকরণ এবং সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ।

এসব সমস্যা সমাধানে বিডা ইতোমধ্যে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদি কী কী পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করছে সেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে জানানো হয় এবং তাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়।

সভায় প্রত্যেক রাজনৈতিক দল বিডা চেয়ারম্যান ও কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের একটি আয়োজনের জন্য সাধুবাদ জানান। তারা বিডার সংস্কার পরিকল্পনা ও অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টিতে বিডার কার্যক্রমের প্রতি নিজেদের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি দেশি বিনিয়োগকারীদেরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিডা কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান।

এ ছাড়া দেশে দক্ষ শ্রমিক গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আইনি জটিলতা দূর করা, শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা এবং পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সঙ্গে বিডা কর্তৃপক্ষকে আলোচনার জন্য পরামর্শ দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।

সভায় রাজনৈতিক দলগুলো দেশের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার দিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদানের আহ্বান জানায়।

সকলের পরামর্শ ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের আগামী প্রেজেন্টেশনে সংস্কার পরিকল্পনায় স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই, জাতীয় স্বার্থের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না। চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের সমগ্র বাংলাদেশের বন্দর। এটাকে বিশ্বমানের একটি বন্দরে আমরা রূপান্তরিত করতে চাই কিন্তু সবার আগে জাতীয় স্বার্থ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের কম্প্রোমাইজ (আপোস) করা হবে না।’

নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ ধরনের ইতিবাচক আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।