বাসস
  ১০ মে ২০২৫, ১৭:১৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেড়েছে সীমান্ত হত্যা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১০ মে, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় বেড়েছে সীমান্ত হত্যার ঘটনা। গত এক বছরে ভারত সীমান্তবর্তী তিন উপজেলায় ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) গুলি ও নির্যাতনে অন্তত ৭ বাংলাদেশি হতাহত হয়েছেন। 

এছাড়া বিএসএফের গুলিতে একজন ভারতীয় নাগরিকও আহত হয়েছে। এসব ঘটনায় আতঙ্ক বাড়ছে সীমান্ত ঘেঁষা বাসিন্দাদের। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন এবং মাদক চোরাচালানের কারণেই সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটছে। 

তবে এসব ঘটনায় প্রতিপক্ষ বিএসএফ-এর কাছে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পাশাপাশি স্থানীয়দের সচেতন হওয়ার পরামর্শ বিজিবির।  সীমান্তে নিজ ফসলি জমিতে কাজ করতে গেলে তাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে  বিএসএফের বিরুদ্ধে। এসব সীমান্ত হত্যা বন্ধে স্থানীয়রা পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে।

জানা যায়, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি কসবার পুটিয়া সীমান্তে গরু চড়াতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে আল আমিন নামে কৃষক নিহত হন। পরে পতাকা বৈঠক করে মরদেহ ফিরিয়ে আনে বিজিবি। 

গত ৮ এপ্রিল বিজয়নগরের সেজামুড়া সীমান্তে বিএসএফ’র নির্যাতনে মৃত্যু হয় মুরাদুর রহমান নামে এক কৃষকের। ২৫ এপ্রিল আখাউড়ার ইটনা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে গুরুতর আহত হয় আসাদুল ইসলাম নামে আরেক যুবক। 

এছাড়া ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল কসবার পুটিয়া সীমান্তে ঘোরাফেরার সময় হাসান নামে এক যুবককে  গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। একই বছরের ২৫ নভেম্বর কসবার বায়েক সীমান্তে ঘুরতে গিয়ে বিএসএফের ছোঁড়া গুলিতে আহত হয় রুকন উদ্দিন ও জাকির হোসেন নামে আরও দুই যুবক। 

সর্বশেষ ৫ মে কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে সাকিব নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় সুজন বর্মণ (৩৫) নামে এক ভারতীয় নাগরিকও গুলিবিদ্ধ হন।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার প্রায় ৭২ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। আর এসব সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে আতঙ্ক।  চোরাকারবারি ধরার অজুহাতে নিজেদের সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশিদের হয়রানি করে বিএসএফ সদস্যরা।  ফাঁকা গুলিও ছোঁড়ে কখনো কখনো। মূলত সীমান্তের দেড়শ গজের মধ্যে অনেক বাংলাদেশি নিজেদের জমি চাষ করেন, চড়ান গবাদি পশু। যে কারণেই  শূন্যরেখায় আনাগোনা থাকে স্থানীয়দের।  

বিএসএফের নির্যাতনে নিহত বিজয়নগরের মুরাদুর রহমানের স্ত্রী রত্না বেগম  বলেন, আমার স্বামীকে বিএসএফের সদস্যরা ডেকে নিয়ে যান। সেখানে তাকে ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করার পর বিএসএফ পরবর্তীতে তার লাশ ধানের জমিতে ফেলে রেখে চলে যায়। আমার স্বামী কোনো দিন কোন খারাপ কাজ করেনি। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।   

নিহত আল-আমিনের পিতা সুলতান মিয়া জানান, বাড়ির একটি গরু ছুটে গেলে সেটাকে আনতে সীমান্তে এলাকায় যাওয়ার পর তার ছেলেকে গুলি করা হয়। 

তবে বিজিবির দাবি, সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের অসচেতনতা ও চোরাকারবারের কারণে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ঘটছে। 

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-২৫ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে যখন ভেতরে চলে যায় তখন বিএসএফ বাধা দেয়। আমরা বারবার বলি ১৫০ গজের ভেতর যাবেন না। ভেতরে গেলে সীমান্ত হত্যার একটা বিষয় থাকে। কিন্তু এখন আমরা বিএসএফের সাথে যে কোনো বিষয়ে কঠোর ভাবে কথা বলছি।
বিজিবি-৬০ অধিনায়ক লে. কর্নেল জিয়াউর রহমান জানান, বিএসএফের করা প্রতিটি গুলির ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আলোচনা হয়। কীভাবে কী ঘটেছে, সেগুলো জানার চেষ্টা করা হয়।