শিরোনাম
ঢাকা, ১০ মে, ২০২৫ (বাসস) : পুরান ঢাকার ব্যস্ততা আর কোলাহলের ভীড়ে গ্রীষ্মের বার্তা দিচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়া। সবুজের ফাঁকে ফাঁকে রক্তিম সৌন্দর্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ পরিণত হয়েছে উন্মুক্ত এক চিত্রশালায়। যেখানে প্রতিটি কৃষ্ণচূড়া গাছ হয়ে উঠেছে জীবন্ত ক্যানভাস। আগুনরঙা ফুলটি এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি করেছে সেখানে।
শোভাবর্ধক জাতীয় উদ্ভিদ কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া (ডিলোনিক্স রেজিয়া)। এটি ফ্যাবেসি পরিবারের অন্তর্গত।
কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। গাছটি শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে। আমাদের দেশে সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাসে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে। তবে বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় ভিন্ন।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, কৃষ্ণচূড়া গাছটির আদিনিবাস মাদাগাস্কারে। তবে সেখানে এটি এখন বিলুপ্ত প্রায়। ফুলটির আরেক নাম গুলমোহর। যদিও কম লোকই সেই নামটি জানেন। কিন্তু কৃষ্ণচূড়া চেনেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রচলিত আছে, রাধা ও কৃষ্ণের নাম মিলিয়ে এই ফুলের নামকরণ হয়েছে কৃষ্ণচূড়া। একেকটি গাছের উচ্চতা সর্বোচ্চ ১২ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে,শাখা-প্রশাখা বেশি অঞ্চলজুড়ে ছড়ায়। তাই এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে যায়। আর নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চিরসবুজ থাকে। সাধারণত লাল, কমলা ও হলুদ রঙের ফুল দেখা যায় আমাদের দেশে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও বিজ্ঞান অনুষদ, দ্বিতীয় ফটক, কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের পিছনে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফটক, শহীদ মিনারের সামনে এবং ভাষা শহীদ রফিক ভবনের পাশে ফুটেছে থোকায় থোকায় কৃষ্ণচূড়া। ফুলের আভায় আবীর রংয়ে সেজেছে পুরো ক্যাম্পাস। মাটিতে বিছিয়ে আছে ঝড়ে পড়া পাপড়ি। সেগুলোকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের আড্ডা, হৈহুল্লোড় আর ছবি তুলে রঙিন মুহূর্তের স্মৃতি বন্দি চলছেই। আবার কেউ কেউ প্রিয় মানুষটির জন্য কুড়িয়ে নিচ্ছেন কৃঞ্চচূড়ার পাপড়ি। সকাল-সন্ধ্যা যেনো নিয়ম করে গাছের নিচে আড্ডায় মাতেন শিক্ষার্থীরা। শুধু শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা নয় সদরঘাটগামী যাত্রী, পথচারী বা কর্মব্যস্ত মানুষ সকলের নজর কেড়েছে রক্তিম এই ফুল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বেশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করা হয়েছিল জগন্নাথ কলেজ থাকাকালীন। একাডেমিক ভবন ও দ্বিতীয় ফটকের গাছগুলো ২০০৮ সালের পর লাগানো হয়। অন্য গাছগুলো শিক্ষার্থীরা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে লাগানো হয়েছে। ক্যাম্পাসের শান্ত চত্বরে বেড়ে ওঠা "লাল সুন্দরী" নামের শতবর্ষী কৃষ্ণচূড়া গাছটি ২০১৭ সালে ভেঙ্গে পড়ে।
হিসান বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যাবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুর ইসলাম রিফাত বলেন, "গত সপ্তাহে বন্ধুদের সঙ্গে কৃষ্ণচূড়ার নিচে বসে গল্প করেছিলাম, সেই মুহূর্তটা এখনও মনে পড়ে। গ্রীষ্মের তীব্র রোদেও তেমন কষ্ট লাগে নি।"
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাইসা ইসলাম বলেন, "ক্যাম্পাসে ঢুকলেই অন্যরকম অনুভূতি হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে তাকালে মনে হয় যেন কেউ রং ছিটিয়ে দিয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা, বসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করা সবকিছুতেই আনন্দ লাগে। "
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার আহম্মেদ বলেন, "চমৎকার পাতা ও আগুনলাল ফুলের জন্য কৃষ্ণচূড়া গাছ সুপরিচিত। এটি গুলমোহর নামেও পরিচিত। তবে এটি আমাদের দেশীয় গাছ না। উৎপত্তিস্থল মাদাগাস্কার হলেও ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে।
তিনি আরো বলেন, কৃষ্ণচূড়া মাঝারি আকারের পত্রঝরা বৃক্ষ। সাধারণত ১০-১২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। তবে এর শাখা-প্রশাখা বেশ বিস্তৃত। ফুলে সাধারণত চারটি পাপড়ি থাকে। দেশের প্রায় সকল এলাকাতেই কৃষ্ণচূড়া ফুল দেখা যায়। তবে ঢাকার রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন, মিরপুর সড়ক এবং জাতীয় সংসদ ভবনের আশপাশসহ বিভিন্ন প্রধান সড়কের পাশে চোখে পড়বে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া গাছ।